বিএনপি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এরকম নির্বাচন তারা হতেও দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলন এখন পর্যন্ত সরকারের উপর কোনোরকম চাপ তৈরী করতে পারেনি। তবে বিএনপির নেতারা এখনো আশাবাদী। তারা বলছেন, অক্টোবরের মধ্যেই তারা আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন এবং দেশে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিসের ভিত্তিতে,কোন যুক্তিতে তারা এরকম আশাবাদ ব্যক্ত করছেন তার ব্যাখ্যা অবশ্য বিএনপির নেতারা দিচ্ছেন না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি সম্ভাব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন? - এ নিয়েও তারা নানা রকম আলাপ-আলোচনা করছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, আমরা ২০১১’র আগে যেভাবে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছিল, সেরকম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। আর সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য সংবিধানে ওই অংশটি পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন। যেহেতু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেই জন্য তারা চাইলে এটা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন এবং বিএনপির নেতারা এখনো আশাবাদী যে- ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরে আসবে।
সেরকম ব্যবস্থা যদি ফিরে আসে তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাবেন আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর। ২৬শে সেপ্টেম্বর নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শপথ গ্রহণ করবেন। আগে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত ছিল, তখন ব্যবস্থা ছিল সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবেন। সেটি যদি পুন:স্থাপিত করা হয়, তাহলে হাসান ফয়জ সিদ্দিকী হবেন আগামী আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান।
তবে এর বাইরেও বিএনপি বিভিন্ন ব্যক্তির নাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে আলোচনা করছে। বিশেষ করে কূটনৈতিক অঙ্গনে যখন আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু নাম বলা হচ্ছে, যাদেরকে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে পেলে আপত্তি করবে না এবং তাদের জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেও তারা মনে করেন। এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সাবেক আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞা। আব্দুল ওয়াহাব মিঞা বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পর কিছু দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে যখন নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন তিনি পদত্যাগ করেন।
বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে প্রথম পছন্দ তাদের আব্দুল ওয়াহাব মিঞা। এছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে তারা হোসেন জিল্লুর রহমানের কথাও বিভিন্ন স্থানে বলেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ড. হোসেন জিলুর রহমান এখন ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন। তিনি ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দ্বিতীয় ভাগে উপদেষ্টা হয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অভিযাত্রায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। এবারও তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে বিএনপির পছন্দের তালিকায় আছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আরো যে সমস্ত নাম আলোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছেন সাবেক বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। আলী ইমাম মজুমদার ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মৃত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আর কোনো দিন এই রকম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং এই প্রত্যাশা যদি বিএনপি করে থাকে, তাহলে তারা দিবা স্বপ্ন দেখছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিএনপি
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।