আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার বোমা ফাটিয়েছেন। একটি জনসভায় তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, তলে তলে সবার সঙ্গে আপোষ হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোন চিন্তা নাই।
তিনি
এই বক্তব্যটি রেখেছিলেন মঙ্গলবার সাভারের আমিনবাজার ট্রাক্ট টার্মিনাল এলাকায় আয়োজিত শান্তি উন্নয়ন সমাবেশে। এই বক্তব্য প্রচারিত
হওয়ার পরেই সারাদেশে তোলপাড়
শুরু হয়। বিশেষ করে
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ ধরণের বক্তব্যে হতবাক বিব্রত। একজন সাধারণ সম্পাদক
কিভাবে এ ধরনের বক্তব্য
দেন এ নিয়ে আওয়ামী
লীগের অনেকেই অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
যদিও
প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এ
নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের
একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, শেখ হাসিনা
যা অর্জন করেন তা আওয়ামী
লীগের কিছু নেতার অতিকথনে
তার ধ্বংস হয়ে যায়। এটি
তার প্রমান।
গত কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদকের বিভিন্ন বক্তব্য হাস্যরসের উদ্যোগ করছিল। দলকে বিব্রত করছিল।
এর আগেও সিঙ্গাপুর থেকে
ফিরে এসে তিনি বলেছিলেন
যে, দুটি সেলফিতেই ফয়সালা
হয়ে গেছে। কিন্তু ওই বক্তব্যের চেয়ে
এই বক্তব্যের মাত্রা অনেক বেশি এবং
এই বক্তব্যটি বিএনপি লুফে নিয়েছে এবং
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যের পর
গতকালই এ নিয়ে ঠাট্টা
তামাশা করেছেন।
আওয়ামী
লীগের একাধিক নেতাও স্বীকার করেছেন যে সাধারণ সম্পাদকের
বক্তব্য নিয়ে এখন রাজনীতিতে নানা
রকম ঠাট তামাশা হচ্ছে।
অনেকেই এটাকে এই সময়ের সেরা
কৌতুক হিসেবেও মনে করছেন। অবশ্য
ওবায়দুল কাদের আজ
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তলে তলে কথাটি একটি
প্রচলিত শব্দ বলে তিনি উল্লেখ
করেছেন। যেমন খেলা হবে।
তাছাড়া কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য এমন
বক্তব্য তিনি করেছেন। কিন্তু
প্রশ্ন হল কর্মীদের চাঙ্গা
করার জন্য এ ধরনের
বক্তব্য দিয়ে দলকে ছোট করার
দরকার কি?
আওয়ামী
লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক
বলেছেন যে আওয়ামী লীগ
আপোষ করে কখনোই ক্ষমতায়
আসবে না, আসতে চায়
না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে
জনগণের ভোট নিয়ে। আর
জনগণ যদি ভোট না
দেয় সেখানে তলে তলে আপস
করাটা কোন সংস্কৃতি? এ
ধরনের সংস্কৃতির সঙ্গে আওয়ামী লীগ আদৌ পরিচিত
কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন।
আওয়ামী
লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক বলেছেন যে, এই বক্তব্যের
পর আমরা কথাবার্তা বলার
ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তবে একাধিক সূত্রগুলো
বলছে যে ওবায়দুল কাদের
নিজেও তার বক্তব্যে বিব্রত
এবং তিনি বক্তব্যটি রাখার
পর এটি যে ইতিবাচক
হয়নি তা বুঝতে পেরেছেন।
এই জন্যই তিনি আজ সংবাদ
সম্মেলনের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা যাই
দেন না কেন গুলি
একবার ছোঁড়া হয়ে গেলে সেটি
আর যেমন ফেরত নেওয়া
যায় না তেমনি এই
বক্তব্য এখন রাজনীতিতে একটি
ইস্যুতে পরিণত হবে।
বিএনপি
ইতিমধ্যে বলার চেষ্টা করছে,
এর অর্থ এই যে
আওয়ামী লীগের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
আওয়ামী লীগের জনসমর্থন নেই। তারা তলে
তলে দেন দরবার করেই
ক্ষমতা গ্রহণ করতে চায়। অথচ
আওয়ামী লীগের উপর যখন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছিল, তখন
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার
বলা হচ্ছিলো যে আমরা জনগণের
উপর নির্ভরশীল। আমরা বিদেশি চাপের
উপর নির্ভরশীল নই। এর ফলে
আওয়ামী লীগের এই অবস্থানকেই যেন
প্রশ্নবিদ্ধ করলো ওবায়দুল কাদেরের
এই বক্তব্য।
বাংলাদেশের
রাজনীতিতে আগামী কয়েকদিন এই বক্তব্য একটা
বড় ইস্যু হবে বলেই মনে
করছেন অনেকে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।