কূটনীতিকপাড়ায় এখন রাজনৈতিক সমঝোতার একটি প্রস্তাব নিয়ে তুলকালাম চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন কূটনীতিক মহল আলাপ আলোচনা করছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শলা পরামর্শ করছেন। সুশীল সমাজের কোন কোন প্রতিনিধিও এই সমস্ত আলাপ আলোচনার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এই প্রস্তাবটির মূল প্রণেতা হলেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
আসিফ
নজরুল সাম্প্রতিক সময়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন
যে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সময়ে ছুটিতে থাকবেন
এবং তার বদলে একজন
গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এর
ফলে দুই পক্ষেরই একটি
সমঝোতাপূর্ণ অবস্থান হবে। প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ
করলেন না, অন্যদিকে তার
নেতৃত্বে নির্বাচনও হল না।
প্রধানমন্ত্রীকে
ছুটিতে পাঠানোর এই প্রস্তাব আওয়ামী
লীগ প্রথমেই নাকচ করে দিয়েছে
এবং এ ধরনের প্রস্তাব
অসাংবিধানিক এবং হাস্যকর বলেও
আওয়ামী লীগ জানিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে
এই প্রস্তাবটি কূটনীতিকপাড়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কূটনীতিকপাড়ায় বিভিন্ন আলোচনায় এই প্রস্তাব নিয়ে
কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ কথা বলছেন।
গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই প্রসঙ্গটি
না এনেও কূটনীতিকদের বাড়াবাড়ি
এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপ নিয়ে কঠোর অবস্থান
গ্রহণ করেছে।
সরকারঘনিষ্ঠ
সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের নেতারা এই প্রস্তাব নিয়ে
কূটনীতিকদের তৎপরতা সম্বন্ধে অবহিত। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে এ
নিয়ে কোন কথা বলছেন
না। তবে একাধিক সূত্র
বলছে যে, এই প্রস্তাবটি
নিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গেও পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের আলোচনা হয়েছে এবং এদের মধ্যে
অন্তত তিনজন এই প্রস্তাবের ব্যাপারে
ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন তারা।
এই প্রস্তাবে তাদের সম্মতি আছে বলে তাদের
ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। তবে ওই তিন
নেতাই বলছেন যে দলীয় ফোরামে
এই বিষয়টি তাদের পক্ষে তুলে ধরা সম্ভব
নয়। তবে তারা (বিদেশি
কূটনীতিক) যদি সরকারের সাথে এই
বিষয়ে কথা বলে এবং
সরকারের নীতি নির্ধারকরা যদি
এ ব্যাপারে তাদের মতামত চায়, তাহলে তারা
এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে।
বিভিন্ন
সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন
দেখতে চায়। আর এই
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তখনই সম্ভব হবে
যখন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সহিংস
রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছে।
তারা জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাসের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে
চাইছে। ইতিমধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবলকে
তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়েছে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করছে। এমনকি বিএনপির সন্ত্রাসী তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালও। গত কয়েক দিনের
অবরোধের নামে বিএনপি একশোর
বেশি গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। এরকম একটি বাস্তবতায়
পশ্চিমা দেশগুলোর বিএনপি’র প্রতি যে কঠোর মনোভাব
দেখানো উচিত ছিল সেটা
তারা সেটি দেখায়নি। বরং
তারা বিএনপির ব্যাপারে এক ধরনের সহানুভূতি
এবং নমনীয় আচরণ গ্রহণ করছে বলে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর
প্রেক্ষিতেই ধারণা করা হচ্ছে যে,
কয়েকটি দেশ সম্ভবত বাংলাদেশে
আগামী নির্বাচন নিয়ে উভয়ের রাজনৈতিক
দলের মধ্যে একটি সমঝোতা তৈরি করতে চায়।
আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে বলা
হয়েছে, বিএনপি এখন একটি সন্ত্রাসী
সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তাদের সাথে কোনওরকম সংলাপ
নয়। আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র সংসদে
থাকা দলগুলোর সাথে সংলাপ করতে রাজি আছে।
সংসদের বাইরে থাকা কোন রাজনৈতিক
দলের সাথে তারা কোন
রকম সংলাপ করবে না।
এরকম
একটি পরিস্থিতিতে, আসিফ নজরুলের প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে
আলোচনা এবং সেই প্রস্তাবের
ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার রহস্যময় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এটা ধৃষ্টতাপূর্ণ। বাংলাদেশের
মাটিতে এই রকম বড়
এরকম প্রস্তাব কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
আসিফ নজরুল সুশীল সমাজ নির্বাচন বাংলাদেশ রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন