দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৩৬২জন নৌকা প্রত্যাশী প্রার্থী। এর মধ্যে ৩০০ আসনের বিপরীতে ২৯৮ জনকে নৌকা প্রতীকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে বাদ পড়া বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চলেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ
এই নির্বাচনের আওয়ামী লীগের কর্তাব্যাক্তিদের ‘ছাড়’ দেওয়ার মনোভাবের কারণেও নৌকাবঞ্চিত
অনেক প্রার্থী অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিদ্রোহীসহ জনপ্রিয় হয়েও যারা মনোনয়ন
পাননি তারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এছাড়াও সংসদ
সদস্য হিসেবে নির্বাচন করতে দেশজুড়েই জেলা-উপজেলার চেয়ারম্যানগণ পদত্যাগ করে আসন্ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চলেছেন।
এদের মধ্যে
যারা উল্লেখযোগ্য এবং আলোচিত তাদের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
জামালপুর-৪
(সরিষাবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আলোচিত সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ
হাসানসহ তিন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
নৌকা প্রতীক
না পেয়ে রাজশাহী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের
লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্যসহ আরও চার আওয়ামী লীগের নেতা। রাজশাহী-১
(গোদাগাড়ী-তানোর), রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর), রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে দলের
মনোনীত প্রার্থীর বাইরে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে
একজন সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন।
বরিশাল- ৫
(মহানগর-সদর) আসন থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন মহানগর আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
ময়মনসিংহ-৯
নান্দাইল আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়রুল আবেদিন খান
তুহিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের
১৬টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে মনোনয়নবঞ্চিত ৯ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা
দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১০ (নগরের ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র
মোহাম্মদ মনজুর আলম।
এছাড়াও সিলেট
বিভাগের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীতদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার
ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিত এক সংসদ সদস্যসহ ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক চৌধুরী সুমন (ব্যারিস্টার
সুমন)। এর আগে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন
তিনি।
পদত্যাগ
করে নির্বাচন করবেন জেলা
ও উপজেলা চেয়ারম্যান:
দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ
নিতে পদ ছেড়েছেন ৩০
জেলা ও উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান। তারা স্থানীয় সরকার
বিভাগ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা
দিয়েছেন। বিভাগের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ৩০
নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ
দিন। তার মধ্যে পদত্যাগের
সংখ্যা আরও বাড়বে বলে
তিনি মনে করছেন।
পদত্যাগকারীদের
বেশির ভাগ এবার স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
রাজবাড়ী-১ আসনে সংসদ
সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হচ্ছেন সদর উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ)
আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর)
আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার।
কুড়িগ্রাম
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলী, যশোর
জেলা পরিষদের সদস্য আজিজুর ইসলাম পদত্যাগ করেছেন। উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগীদের মধ্যে
রয়েছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এস এম আল
মামুন, নেত্রকোনার দুর্গাপুরের জান্নাতুল ফেরদৌস, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের জাহিদুল ইসলাম।
আরও
বেশ কয়েকটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান
সালাহ উদ্দিন। তিনি লক্ষ্মীপুর–৩
(সদর) আসন থেকে নির্বাচন
করতে চান।
নৌকাবঞ্চিত মনোনয়ন স্বতন্ত্রপ্রার্থী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।