বিগত সব নির্বাচনেই
কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিদ্রোহী
হিসেবে বিবেচনা করেছে আওয়ামী লীগ। কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু এবার
সেই বাধা আর থাকছে না।
কেন্দ্র থেকে
জানানো হয়েছে, এবার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া
হবে না। ফলে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে দেখা মিলতে পারে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র
প্রার্থীদের।
দলের মনোনয়ন-বঞ্চিত
হয়ে নিজ সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী সরাসরি জানিয়েছেন, তাঁরা
নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন। এই প্রেক্ষাপটে, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে
মনোনয়ন-বঞ্চিত ৯ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগের
৩৯ সংসদীয় আসনের ১০টিতেই এবার নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আলোচিত ১০ আসনে
এবার বাদ পড়েছেন তিনবারের এমপিরা। নানা কারণে প্রভাবশালী এসব নেতা মনোনয়ন থেকে ছিটকে
পড়ায় অধিকাংশই স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মনোনয়ন না পেয়ে
লাইভে এসে কান্না, আবেগ ঘন চিঠি, প্রতিপক্ষকে হুমকি মূলক স্ট্যাটাস দেয়ার মত ঘটনাও
ঘটিয়েছেন অনেকে।
কুমিল্লা-১
(দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাননি এমপিপুত্র দাউদকান্দি উপজেলা
পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলী
সুমন। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে লিখেছেন- ‘সবাই
প্রস্তুত হোন, খেলা হবে ইনশাআল্লাহ’।
সবকিছু মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে তাই অপ্রত্যাশিত অ্নেক কিছুই দেখার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: দুইশ আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ
ঢাকা-১০ আসনের
রফিক নামের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, সাবেক এমপি দের অনেকেই এবার
দলের মনোনয়ন পায় নাই। অন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতার যদি সেসব আসনে জনপ্রিয়তা থাকে তাহলে
তারাও জিতে যেতে পারে। এবার হয়ত মনোনিত প্রার্থীর অনেকেই নির্বাচনে জিততে পারবেন না।
তবে নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নির্ধারিত করে দিবেন আমরা এক হয়ে তার পক্ষেই কাজ করবো।
আরেক ভোটার
সিদ্দিকুর বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য এইটা একটা সুযোগ। তাদের
যদি সেই সক্ষমতা থাকে তারা অবশ্যই নির্বাচনে বিজয় লাভ করবে। তবে শুধু পরিচিতি লাভের
জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া টা দলের জন্যই ক্ষতি।
২০১৪ সালের
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। সেবার দেড় শরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এবার যাতে সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য
এবার ‘ডামি প্রার্থীর’ কৌশলে হাঁটছে আওয়ামী লীগ।
স্বতন্ত্র নির্বাচন আওয়ামী লীগ আন্তদলীয় কলহ প্রার্থী বহিষ্কার মনোনয়ন বিদ্রোহী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন