আওয়ামী লীগ যে ২৯৮ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনকে বসিয়ে দিতে পারে। জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের সাথে আসন সমঝোতার জন্য তাদের ‘ত্যাগ স্বীকার’ করতে হতে পারে। আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগ তার শরীকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ১৪ দলের শরীকরা ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও জাতীয় পার্টি লাঙ্গল নিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে সব আসনে ‘সমঝোতা’ হবে, সেই সব আসনে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীকে কোন প্রার্থী রাখবে না। তবে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে, তাদের ব্যাপারে অবশ্য আওয়ামী লীগের কোন করণীয় নেই বলেই জানিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির জন্য কটি আসন ছেড়ে দেয়া হবে তা চুড়ান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ২০টি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে রাজী। তবে জাতীয় পার্টি অন্তত ৫০টি আসন চায়। এনিয়ে এখনও সমঝোতা হয়নি। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি দুই দলই এটিকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন না। উভয় দলের নেতারাই বলছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা সমঝোতায় পৌছতে পারবেন। জাতীয় পার্টিকে আাওয়ামী লীগ যে আসন গুলো ছেড়ে দিতে পারে বলে এখন পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে ঢাকার দুটি আসন রয়েছে। জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে এমন সম্ভাব্য আসনগুলো হলো :-
১. জাতীয় আসন-২১ (রংপুর-৩), এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে তুষার কান্তি মন্ডলকে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি.এম কাদেরের জন্য এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ তার প্রার্থীকে প্রত্যাহার করতে পারে।
২. জাতীয় আসন -১৪ (নীলফামারী-৩), এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মো: গোলাম মোস্তফাকে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব:) সোহেল রানার জন্য এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দ দেবে না।
৩. জাতীয় আসন-১৫ (নীলফামারী-৪), এই আসনে আওয়ামী লীগ দিয়েছে জাকির হোসেন বাবুলকে, জাপার আহসান আদেলুর রহমানের জন্য এই আসন নৌকা শূণ্য থাকতে পারে।
৪. জাতীয় আসন-১৯ (রংপুর-১), স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গার জন্য এই আসনটি নৌকা শূণ্য থাকতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মো: রেজাউল করিম রাজুকে।
৫. জাতীয় আসন-২৯ (গাইবান্ধা-১), জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর জন্য এই আসনে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দ নাও দিতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ আফরোজা বারীকে মনোনয়ন দিয়েছে।
৬. জাতীয় আসন-৩৭ (বগুড়া-২), জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ’র জন্য এই আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তৌহিদুর রহমান মানিক।
৭. জাতীয় আসন- ১২০ (বরিশাল-২), ওয়াকার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননকে এই আসনে নৌকা প্রতীক দিতে পারে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে বাদ যাবেন মনোনয়ন পাওয়া তালুকদার মো: ইউসুফ।
৮. জাতীয় আসন-১২১ (বরিশাল-৩), জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপুকে আওয়ামী লীগ এই আসনটি ছেড়ে দিতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ সরদার মো: খালেদকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
৯. জাতীয় আসন-১৬৪ (কিশোরগঞ্জ-৩), এই আসনে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুকে ছেড়ে দিতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো: নসিরুল ইসলাম খান।
১০. জাতীয় আসন-১৭৭ (ঢাকা-৪) জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সানজিদা খানম।
১১. জাতীয় আসন -১৭৯ (ঢাকা-৬) জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদকে এই আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিতে পারে। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সাঈদ খোকন মনোনয়ন পাবেন না।
১২. জাতীয় আসন-২০৮ (নারায়ণগঞ্জ-৫) আসনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের জন্য আওয়ামী লীগ আসনটি খালি রেখেছে।
১৩. জাতীয় আসন-২২৭ (সুনামগঞ্জ-৪), এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী পীর ফজলুর রহমানকে ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পি এস সির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক।
১৪. জাতীয় আসন-২৬৭ (ফেনী-৩) জাতীয় পার্টির লে: জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো: আবুল বাশার।
১৫. জাতীয় আসন-২৮২ (চট্টগ্রাম-৫), জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুস সালাম নৌকা প্রতীক পাবেন না।
এছাড়াও কুষ্টিয়া-২ আসনটি জাসদের হাসানুল হক ইনুর জন্য খালি রেখেছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহী-২ আসনটি ওয়াকার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশার জন্য ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
আরো কয়েকটি আসনে সমঝোতা হতে পারে। সমঝোতা হলে জাতীয় পার্টির আসন গুলোতে ‘নৌকা’র প্রার্থী থাকবে না ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন