বিএনপি একদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একদফা আন্দোলন করছে, অন্যদিকে তারা দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত এক মাসে দল থেকে প্রায় ২৭৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এর মধ্যে নেতাই বহিষ্কার হয়েছেন ২৭ জন।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি এখন দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো- এই নীতি অবলম্বন করে চলছে এবং দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের প্রস্তুতির হিসেবেই তারা এই শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। একাধিক কারণে বিএনপিতে বহিষ্কারের উৎসব চলছে।
প্রথম কারণ হলো- যারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যোগদান করেছেন, তাদেরকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলেন শাহজাহান ওমর। এছাড়াও যে সমস্ত ব্যক্তিরা সরকারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করেছিল নির্বাচনের জন্য, তাদেরকে সনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সে সমস্ত নেতারা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে না তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ রকম বহিষ্কারাদেশের তালিকায় পড়েছে এখনো পর্যন্ত বিএনপির অন্তত ৩১ জন। এছাড়াও যাদেরকে সন্দেহজনক মনে করা হচ্ছে, যারা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন এবং সরকারের সঙ্গে নির্বাচন ছাড়াও নানা রকম দেনদরবার করছে তাদেরকেও বহিষ্কার করা হচ্ছে। এ রকম অন্তত ৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে বিএনপির বক্তব্য সুষ্পষ্ট।
প্রথমত তারা বলছেন যে, এই বহিষ্কারাদেশ সম্পর্কে তাদের কোন হাত নেই। এটির পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে লন্ডন থেকে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এবং, এই পর্যবেক্ষণে যারা দলের জন্য যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত নয় বা দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে বা গোপনে গোপনে দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে চিহ্নিত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটি শুধু যে বিএনপির মূল সংগঠনের জন্য প্রযোজ্য তা নয়, বিএনপির অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য এই নীতি। এবং, এই সমস্ত নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অবলম্বন করছে।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, স্পষ্টতই দলটি এখন দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের আন্দোলনকে তারা দুটি ভাগে ভাগ করেছে। প্রথমভাগে হলো- নির্বাচন প্রতিরোধ করার আন্দোলন। সেই আন্দোলন সফল হবে না-এটি বিএনপির সকলেই জানে। কিন্তু, বিএনপি মূল লক্ষ্য হলো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি-এটি প্রমান করা। এজন্য তারা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, যেন জনগণ ভোট দিতে যেতে ভয় পায়। আর, এ কারণেই তারা অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপির দ্বিতীয়ভাগের কর্মসূচিকেই আসল কর্মসূচি অভিহিত করা হচ্ছে, যেটি বিএনপি শুরু করবে নির্বাচনের পর থেকে। তখন থেকে বিএনপি সরকারকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে এই সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ধরণের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে চায়। আর, এই দুই কৌশলের মধ্যে যারা দলের জন্য দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত নয় বা যারা আপোসকামী তাদের দলে রাখার প্রয়োজন নেই। এই বক্তব্য সাফ জানিয়ে দিয়েছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির নেতাদের এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে। হয় কাজ করো, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করো, অথবা দল ছাড়ো। আর এ কারণেই বিএনপিতে এখন এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন, বিএনপিতে চলছে এখন স্বৈরশাসন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।