আদর্শিক জোট ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক শেষ হয়েছে। তবে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে মূল শরীক আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কিছু জানানো হয়নি।
আওয়ামী লীগ
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার
(৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এ বিষয়ে বিফ্রিং করবেন বলে দলটির সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা
সাড়ে ৬ ছয়টার দিকে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক শুরু হয়। প্রায় তিন ঘন্টার বৈঠকে আওয়ামী লীগ
এবং ১৪ দলের শরিকদের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করার বিষয়ে জোটের প্রধান শেখ হাসিনা সঙ্গে আলোচনা করে। এই আলোচনার বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার ব্রিফিং করবেন ওবায়দুল কাদের।
জানা যায়, দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগ মাত্র ২টি আসন ফাঁকা রেখে
৩০০ সংসদীয় আসনের ২৯৮ টিতেই এককভাবে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২
আসনে হাসানুল হক ইনু, এবং নারায়ণগঞ্জের একটি আসন ফাঁকা রেখে বাকি আসনে প্রার্থী ঘোষণা
করেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়েই এখনো সমঝোতায় পৌছাতে পারেনি ১৪ দল।
অন্যদিকে আদর্শিক
জোট ১৪ দলের শরিকদের পক্ষ থেকে সর্বমোট ২০টি আসন চাওয়া হলেও আওয়ামী লীগ দিতে চায় ৫টি
আসন। এর মধ্যে জাসদ প্রধান হাসানুল হক ইনু ছাড়াও ওয়ার্কাস পার্টির প্রধান রাশেদ খান
মেনন, ফজলে হোসেন বাদশা, বগুড়ার একটি আসনে ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী এবং অন্য আরেকটি
আসনে জাসদের প্রার্থী দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এই নিয়েই আপত্তি জানিয়েছে ১৪ দলের শরিকরা।
তাদের প্রত্যাশা অন্তত ২০টি আসন।
অন্যদিকে, আগামীকাল
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গেও আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে
আওয়ামী লীগ। ওই বৈঠকে দুই দলের নেতৃস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করার
কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮
সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আদর্শিক জোট ১৪ দল। ঐ সময় থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটগতভাবে
আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয় জোটের শরিকরা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও তারা আসন ভাগাভাগির
মাধ্যমে সমঝোতায় পৌছায়।
সর্বশেষ গত
১৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্টিত হয়। এতে জোটের প্রধান শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন,
১৪ দল জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও
আদর্শিক জোট ১৪ দল ঐকবদ্ধ হয়ে ভোটে অংশ নেবে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন