আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বড় ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ড. রাজ্জাকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের মধ্যে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ওবায়দুল কাদের এর পরপরই ড. রাজ্জাকের বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।
রাজ্জাককে ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতা টেলিফোন করে ভর্ৎসনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ড. রাজ্জাক কেন, কীভাবে, কোন প্রেক্ষাপটে এ কথা বলেছেন? বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এই দুইজন নেতা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন যে, ড. আব্দুর রাজ্জাক ভুলক্রমে বা বিভ্রান্ত হয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেননি। তিনি জেনে বুঝেই বক্তব্য দিয়েছেন। বিশেষ করে বক্তব্য দেওয়ার পর তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা আরও ঔদ্ধত্বপূর্ণ এবং দলের নীতি ও অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক। আর এ কারণেই ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রও বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হবে তার সবকিছু নির্বাচনের পরে। এখন দল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কোন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না। আর এখন যেহেতু নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা চলছে, এই মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে ড. রাজ্জাক জন্য লাগামহীন কথাবার্তা আর না বলেন, এজন্য তাকে আগাম সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। তিনি অবশ্য তার বক্তব্যের ব্যাপারে তার মতো করে ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন। তিনি বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সমালোচনা করেছেন ইত্যাদি বলে দায় এড়ানোর কৌশল করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে সর্বনাশ তিনি করেছেন যে, বিএনপি নেতাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব, তা অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের আরেকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞানহীন অর্বাচীনই কেবল এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন বলে ড. রাজ্জাকের বক্তব্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন ওই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেছেন যে, ড. রাজ্জাক সুশীল সমাজের কোন এক অংশের প্ররোচনায় এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। তবে ড. রাজ্জাক তার ঘনিষ্ঠদেরকে কোন যোগসাজশের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকার যে চেষ্টা করেছিল সেই চেষ্টা ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তবে, নির্বাচনের পর ড. রাজ্জাক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ হারাতে পারেন, তাকে নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, এমন কথা শোনা যাচ্ছে।
তবে সবকিছু মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় ভারি পদ পেয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পরেন। কী করতে হবে, কী বলতে হবে, সে সম্পর্কে কোন রকম ভারসাম্য তাদের থাকে না। আর ড. রাজ্জাকের বক্তব্য এ রকম ভারসাম্যহীনতার একটি বড় উদাহরণ। তিনি একদিকে যেমন দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অন্যদিকে তিনি বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগগুলোকে বানোয়াট এবং মিথ্যা হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
তৃতীয়ত, তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আওয়ামী লীগ যে আদালত এবং আইনকে ব্যবহার করছে, এরকম গুরুতর অসংলগ্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এ ধরনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেটার জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন, গত কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। নেতারা ইচ্ছেমতো লাগামহীন বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ ধরনের বক্তব্য দলের জন্য যে কত বড় ক্ষতি হতে পারে, তা অনুধাবন করলে ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীরা।