আগামীকাল
(৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ
নির্বাচনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী
ও প্রতিমন্ত্রী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের
সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন ।
শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনে পরাজয়ও বরণ করতে পারেন।
দ্বাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছে না বিএনপিসহ অনেক
রাজনৈতিক দল। তবে এ
নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছে
বর্তমান সরকার দল আওয়ামী লীগ।
এ কারণে অন্যান্য আসনের মতো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের
আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা
বলছেন, স্থানীয় নেতাকর্মীরা শাস্তির মুখোমুখি হতেন যদি দলীয়
প্রার্থী ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীর
পক্ষে কাজ করত। কিন্তু
এবারের নির্বাচনের চিত্র ভিন্ন। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও বাধাহীনভাবে যে যার পক্ষে
কাজ করছেন। এ কারণে সুবিধা
পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
দীপু
মনি-শামছুল হক ভূঁইয়া: চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী
লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু
মনিকে ছাড় দিতে নারাজ
স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের
সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ
সদস্য শামছুল হক ভূঁইয়া। বর্তমানে
তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঈগল
প্রতীকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দস্তগীর
গাজী-শাহজাহান ভূঁইয়া: আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে পাট
ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের উপজেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া। দলীয় ও স্বতন্ত্র
দুই প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ, শোডাউনে
সরগরম নির্বাচনী এলাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, আমি নির্বাচিত হলে
রূপগঞ্জে অস্ত্র ও মাদক নির্মূলে
কাজ করব। রূপগঞ্জের জনগণ
আমার সঙ্গে আছে।
নূরুল
মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন-সাইফুল ইসলাম খান বীরু: নরসিংদী-৪ আসনে এবারও
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন মনোহরদী উপজেলার পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু। জানা
গেছে, দুই প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে
ভোট চাচ্ছেন। তাদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সাধন
চন্দ্র মজুমদার-খালেকুজ্জামান তোতা: নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী
লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান তোতা। তিনি চন্দননগর ইউনিয়ন
পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এ ছাড়া, তিনি
নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।
নুরুজ্জামান
আহমেদ-সিরাজুল হক: লালমনিরহাট-২
আসনে নির্বাচন করছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
থাকছেন জেলা আওয়ামী লীগের
সহসভাপতি ও আদিতমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক।
আ ক ম মোজাম্মেল
হক-রেজাউল করিম রাসেল: গাজীপুর-১ আসনে টানা
চতুর্থবারের মতো দলীয় প্রতীক
নৌকা পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম
মোজাম্মেল হক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী
ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা
চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল।
জানা
গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেলের বড়
শক্তি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের
সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ
জাহাঙ্গীর আলম।
জাহিদ
আহসান রাসেল-কাজী আলিম উদ্দিন:
গাজীপুর-২ আসনে নৌকার
মাঝি যুব ও ক্রীড়া
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। আসনটিতে আওয়ামী লীগের আরও দুজন স্বতন্ত্র
প্রার্থী রয়েছেন। একজন গাজীপুর মহানগর
আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী
আলিম উদ্দিন, অপরজন গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। এর মধ্যে কাজী
আলিম উদ্দিনের পক্ষে কাজ করছেন সাবেক
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। দুই আসনে
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হয়ে জাহাঙ্গীরের প্রচারণার
ফলে গাজীপুরে তৈরি হয়েছে ভোটের
নতুন সমীকরণ।
এনামুর
রহমান-মুরাদ জং: ঢাকা-১৯
আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
এনামুর রহমান। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার
মো. তৌহিদ জং ওরফে মুরাদ
ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর। শেষ পর্যন্ত ফলাফল
কী হয়, জানা যাবে
৭ জানুয়ারি।
শাহরিয়ার
আলম-রাহেনুল হক
রাজশাহী-৬ আসনে টানা
চতুর্থবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার মূল
প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাহেনুল হক রায়হান। এ
আসনে ১৯৯৯ এর উপনির্বাচনে
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এ
নির্বাচনে শাহরিয়ারের সঙ্গে রাহেনুলের শক্ত লড়াইয়ের সম্ভাবনা
রয়েছে।
মাহবুব
আলী-ব্যারিস্টার সুমন: হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী
লীগের প্রার্থী বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ
সায়েদুল হক সুমন। আওয়ামী
লীগের প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে
সক্রিয় আছেন ব্যারিস্টার সুমন।
তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,
তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস
পাওয়া যাচ্ছে।
ফরহাদ
হোসেন-আব্দুল মান্নান: মেহেরপুর-১ আসনে আবার
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। নৌকা প্রতীকের এ
প্রার্থীর বিরুদ্ধে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়তে স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক
আব্দুল মান্নান। দলের আরেক সাবেক
সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিনও রয়েছেন এ দৌড়ে। তবে,
ফরহাদ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী
আব্দুল মান্নানকে বেশি সক্রিয় দেখা
যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচনে ফরহাদের সঙ্গে আব্দুল মান্নানের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
জুনাইদ
আহমেদ পলক-শফিকুল ইসলাম
শফিক: নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী
লীগের মনোনীত প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নৌকা এবং সদ্য
পদত্যাগকারী সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের ঈগল প্রতীকের লড়াই
জমজমাট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমার
দৃঢ় বিশ্বাস, গত ১৫ বছর
নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের
মানুষ যে উন্নয়ন, সেবা
ও সুশাসন পেয়েছে; সেই নৌকার প্রতি
আস্থা ও সমর্থন আবারও
তারা ব্যক্ত করবেন। অন্যদিকে শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ১৫
বছর দায়িত্ব পালন করে সিংড়ার
জনগণের দাবির মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ
নিয়েছি। আশা করছি জনগণের
ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দ্বাদশ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি
মন্তব্য করুন
বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে এবং সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী ফের কারাগারে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ কেউ আছেন একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। অনেককে বিভিন্ন মামলায় আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ। সর্বশেষ সোমবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎভাবে লাগাতার আন্দোলনে নামে বিএনপি। মূলত ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একদফা দাবিতে টানা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যায় বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জোটগুলো। এ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি তারা। একপর্যায়ে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ ৬২টি রাজনৈতিক দল। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন করে বিএনপি। নানামুখী তৎপরতার পরও নির্বাচন ঠেকাতে না পারা বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়ে। সেই থেকে ধীরে চলছে বিএনপি। নেই রাজপথের কঠোর কোনো কর্মসূচি। সম্প্রতি দলীয় কিছু কর্মসূচিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে বলে দলটির অভিযোগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজপথে জোরালো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও পুরোনো মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও সাজার ঘটনা দলের নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য হামলা-মামলা ও গুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। এটা সবাই জানেন যে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে আমাদের নিরীহ ও নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সরকার কিন্তু বিরোধী দল দমনসহ বিএনপিকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। মামলা-মোকদ্দমা আজও শেষ হয়নি। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের কারও বিরুদ্ধে ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত মামলা আছে। গভীর রাতেও গ্রামে-গঞ্জে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হানা দেয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মকবুল ইসলাম টিপু, ওমর নবি বাবু, মাহবুবুর রহমান টিপু, রফিকুল ইসলাম ময়না, মোহাম্মদ রবিন, মোহাম্মদ সালেহ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান), জেলা বিএনপি নেতা মোহিতুর রহমান হেলাল, মাহমুদুর রহমান, স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরীসহ ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর জুরাইন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মনির মুন্সী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব বাবুসহ গাড়ি চালককে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক আটকের পরও অস্বীকার এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব শাহেদকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
গত ২৪ এপ্রিল খুলনা জেলা বিএনপির ৩০ নেতাকর্মী নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করলে জামিন নামঞ্জুর ও কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবন্দি নেতারা হলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী, বিএনপি নেতা খান জুলফিকার আলী জুলু, রুপসার থানার মোল্লা সাইফুর রহমান, পাইকগাছার এনামুল হক, মো. সাহাবুদ্দিন ইজাদার, মো. সাইফুল ইসলাম পাইক, স্বেচ্ছাসেবক দলের মো. জাকির হোসেন তালুকদার, মো. লায়েকুজ্জামান লাকু, মো. কামাল উদ্দিন, মো. ফরহাদ হোসন, জাসাসের মো. খালিদ লস্কর, ছাত্রদলের জাকারিয়া, মো. তরিকুল ইসলাম রনি, মো. আলমগীর শেখ, যুবদলের ইমরান হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল গাজী, মো. সোহেল গাজী, মো. ফারুক হোসেন, আমিনুল মল্লিক, মো. শিহাব সরদার, বাদশাহ সরকার, মো. আল আমিন শেখ প্রমুখ।
গত ২১ এপ্রিল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর বিএনপির সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২৭ নেতাকর্মীর জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবন্দি নেতারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গোলাম হোসেন, মো. মোরসালিন, আবদুল আজিজ, সাবের হোসেন, কালাম, হান্নান খান, আবু কাউসার ভূঁইয়া, হুমায়ুন, আনিসুর রহমান শিপলু, সানি ও ইয়াসিন, মোস্তাক আহমেদ, মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন সিরাজ, সেন্টু আহমেদ সাকি, সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, মোহাম্মদ মঈন, যুবদলের ওমর ফারুক, রাজু বল্লম রাজু, মো. রকি, বিএনপি নেতা মো. বিল্লাল, মো. ফালান, মোহাম্মদ রনি, মামুন, সাগর ও শাওন। ১৭ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপি নেতা সেলিম আহম্মেদ সালেম, কুতুব উদ্দিন এবং রেজাউর রহমান রাজুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার আগে গত ১৮ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য লতিফুল্লাহ জাফরু, বংশাল থানার মো. মাকসুদ হোসেন এবং মোহাম্মদ আরিফ হাসানের জামিন নামঞ্জুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল দিনাজপুর জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা এবং কেন্দ্রীয় যুবদল নেতার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির শামীম চৌধুরী, মোজাহারুল ইসলাম, নুর ইসলাম (চেয়ারম্যান), ঘোড়াঘাট উপজেলার আবু সাঈদ মিঞা, জেলা যুবদলের মোন্নাফ মুকুল, বিরল উপজেলার মো. মমিনুল ইসলাম, মো. আরমান আলী, মো. মমিন, মো. হাসিনুর রহমান পায়েল এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবুল মনছুর খান দিপক। এর আগে গত ১ মার্চ বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির ৫২ নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ১৮ মার্চ তারা ছাড়া পেয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিনা কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে যেতে হচ্ছে। কারাগার যেন তাদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দীর্ঘ তিন-চার মাস কারাগারে থেকে বেরোলেন। এখনো কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। তাদের জন্য দিনের আলো ও মুক্ত বাতাস গ্রহণ যেন নিষিদ্ধ। এদের প্রায়ই কারাগারের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এভাবে নেতাকর্মীদের কারাগারে ঢুকানো, গুম ও খুন করা এই কর্মসূচি যেন সরকারের শেষ হচ্ছে না। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী একটা আতঙ্কের মধ্যে ভুগছেন। কারণ তিনি জানেন তার জনসমর্থন নেই। সরকার যতই বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন করুক না কেন, একদিন এর বিচার হবেই। সব অন্যায়ের রেকর্ড আছে। তাদের শেষ রক্ষা হবে না।
জানা গেছে, ঈদের আগে সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা কামাল হৃদয়, এসএ খোকন, উত্তরা থানার আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফুজ্জামান বাবর, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরসহ অনেকে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা বলেন, গত বছরের ২৬ অক্টোবর একটি হত্যা মামলায় তার স্বামী খোকনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। একই মামলায় এ পর্যন্ত অনেক আসামির জামিন হলেও খোকনকে জামিন না দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ খোকন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, পায়ে পানি ধরাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অবিলম্বে স্বামী খোকেনর মুক্তি দাবি করেন শিরিন সুলতানা।
সিলেট জেলা বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক তামিম ইয়াহিয়া আহমদ বলেন, মিথ্যা মামলায় পুলিশি হয়রানির কারণে আমি তো ঘরে থাকি না। তবু কেউ কেউ আমার বাসার সামনে ও বিল্ডিংয়ের ছাদে, কেউ আবার ভাঙাড়ি সেজে, মনিটরিং করে। আমি তো চোর বা ডাকাত নই। আমার দল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং জুলুমের বিপক্ষে লড়ছে। আমি সেই দলেরই (বিএনপি) একজন।
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে এবং সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী ফের কারাগারে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ কেউ আছেন একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। অনেককে বিভিন্ন মামলায় আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ। সর্বশেষ সোমবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন কেউ কেউ।
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।