আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রবর্তন করেছিল। উপজেলা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার জন্য আইন সংশোধন করেছিল। কিন্তু, সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি।
আজ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ৬ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে আইন সংশোধন করতে হবে বলে জানা গেছে। আজকের বৈঠকে যদি শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে যে, মার্চের শুরুতেই কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দিয়েছিল এবং নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি তারাও দলের পদ রেখেই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। যদিও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে আছে যে, দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আজ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং যারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এই নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ অনুভব করেছে যে, সারা দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে গেছে। নির্বাচনের পরও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সারা দেশে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও উপদলীয় কোন্দল সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।
এ রকম অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের নেতা কর্মীদেরকে সংযত হওয়া এবং নির্বাচনের পরে সব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পরও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বিরোধ মিটমাট হয়নি বরং সন্ত্রাস সহিংসতা এখনও চলছে। এই অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন যদি দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দলীয় শৃঙ্খলা চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রচুর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং নির্বাচন গোলযোগপূর্ণ হবে। এই বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পাশাপাশি, বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু, যদি নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করে নির্বাচন হয় তাহলে বহু বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এর ফলে নির্বাচন উৎসবমূখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ হবে। সব কিছু বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ কৌশলগত কারণে একটি উৎসবমূখর নির্বাচনের স্বার্থে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে। আজকের বৈঠকেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।