সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে তেমন সুফল পায়নি বিএনপি। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা পর থেকে এই আন্দোলনে আরও ভাটা পড়েছে। পুলিশ সদস্য হত্যা, প্রধানবিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরসহ নাশকতার মামলায় বিপুল নেতাকর্মী কারান্তরীণ হয়েছেন। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এসব মামলার আসামি। যে কারণে, নতুনভাবে পরিকলনা ছাড়া আর উপায় নেই বিএনপি। নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের
তথ্যগুলো বলছে, হরতাল-অবরোধসহ সাম্প্রতিক আন্দোলনে
যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির
অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মূল সংগঠন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব
সংগঠনের অধিকাংশ নেতাই লোক দেখানো ভূমিকা
রেখেছেন মাঠে। কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে
পারেননি তারা। মাঝারি ও তৃণমূল পর্যায়ের
কিছু নেতা মাঠে নামতে
গিয়ে কারাবরণ করেছেন। অথচ যে কোনো
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজ-যুবসমাজই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে
ও পরে দলটির চলমান
‘সরকার পতন’ আন্দোলনে যুবদল,
ছাত্রদল, শ্রমিক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল,
মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল,
জাসাস, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল,
ওলামা দলসহ কোনো অঙ্গ
বা সহযোগী সংগঠনই উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে
পারেনি। এ অবস্থায় পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং নেতা-কর্মীদের
আবারো সক্রিয় করতে সংগঠনগুলোকে নতুন
করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ
নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার
(২৬ জানুয়ারি) জাতীয়তাবাদী ওলামা দল ঢাকা মহানগর
উত্তর ও দক্ষিণের বর্তমান
কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক
কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট
একাধিক সূত্র বলছে, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ
ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করেছে বিএনপি।
পর্যায়ক্রমে সব অঙ্গ ও
সহযোগী সংগঠনকে নতুন ধাঁচে আনতে
চাইছে দলটি। নতুন কমিটি গঠন
ও পুরনো কমিটির হালনাগাদ করতে চান দলটির
হাইকমান্ড তারেক রহমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর
বিএনপির সর্বস্তরে দল পুনর্গঠন ও
অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নতুন নেতৃত্ব তৈরির
দাবি জোরালো হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় অঙ্গ
ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে
বিএনপি।
এ ছাড়াও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও চিকিৎসকদের সংগঠন
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব),
সম্মিলিত পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কমিটিতেও পরিবর্তন আনা হতে পারে।
নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় বিএনপির
এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, আগে প্রেস বিজ্ঞপ্তির
মাধ্যমে কমিটি করা হতো যাকে
অনেকেই ‘পকেট কমিটি’ বলত।
এতে করে তৃণমূলের মতামত
উপেক্ষিত হয়। এবার অঙ্গ
ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি করার
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে তৃণমূলের মতামতও থাকবে। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সব কমিটির নেতা
নির্বাচন করা হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন