নির্বাচনের
পর পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা রাজনৈতিক সমঝোতা এবং সহাবস্থানের নীতি
অনুসরণের জন্য পরামর্শ দিচ্ছে
দুই দলকেই। শুধুমাত্র পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরাই নয়, বরং সুশীল সমাজের
প্রতিনিধিরাও একটি রাজনৈতিক সহবস্থান
এবং একটি সমঝোতার উপর
গুরুত্ব আরোপ করছেন। রাজনৈতিক
সমঝোতা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন
দূতাবাসগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভিন্ন
পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং
তাদেরকে একটি সহনশীল সমঝোতার অবস্থায় আসার জন্য অনুরোধ
জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশের
উন্নয়ন সহযোগী অনেক দেশই মনে
করে যে, বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক সংকট এবং সামনের
দিনগুলোতে যে বৈশ্বিক পরিস্থিতি
তাতে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
দরকার এবং সহনশীল-সমঝোতাপূর্ণ
এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক
পরিবেশ দরকার। আর এ কারণেই
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে যেন একটি রাজনৈতিক
সমঝোতা হয় সেই উদ্যোগ
গ্রহণ করা হচ্ছে।
নির্বাচনের
আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো শর্তহীন সংলাপের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল।
কিন্তু, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউই
সেই সময় এই সংলাপে
যায়নি। বরং, দুই দলই
তাদের স্ব স্ব অবস্থানে
অনড় থেকেছে।
বিএনপি
যেমন বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে
কোনও রকম আলাপ-আলোচনা হবে
না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছে যে,
সংলাপ করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
দাবি মাথা থেকে নামিয়ে
আসতে হবে। সেই সংলাপ ছাড়াই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পথে
গেছে এবং শেষ পর্যন্ত
সফলভাবে নির্বাচন করেছে। এখন নির্বাচনের পর
বিএনপি বর্তমান সরকারকে পরোক্ষভাবে মেনে নিলেও নির্বাচনের
বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তারা এই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনের
কর্মসূচি দেওয়ারও চেষ্টা করছে। কিন্তু, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক হবে না বলে
মনে করছেন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা। এই জন্য দুই
দলকেই আবার নতুন করে আলাপ-আলোচনা শুরু করার জন্য
আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে
বলে দেওয়া হয়েছে যে, আলাপ-আলোচনা
আওয়ামী লীগ করতে রাজি
আছে। আওয়ামী লীগ ধ্বংসাত্মক রাজনীতি
চায় না, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি
চায় না। কিন্তু আলাপ-আলোচনা করার আগে অবশ্যই
বিএনপিকে বর্তমান
নির্বাচনকে মেনে নিতে হবে।
নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপির নেতারা যে ধরনের কথাবার্তা
বলছে তারপর আলোচনা হতে পারে না
বলেও মনে করেন আওয়ামী
লীগের নেতারা।
আওয়ামী
লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, বিএনপি এই
সরকারকে অবৈধ বলছে। তাহলে
সরকারের সঙ্গে সমঝোতা কেন? তিনি বলেন
যে, বিএনপির দাবিগুলিই স্ববিরোধী। তারা একদিকে যেমন বলছে যে,
এই সরকার অবৈধ। অন্যদিকে তারা এই সরকারেরই কাছেই
আবার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করছে। সরকার যদি অবৈধই হয় তাহলে বিএনপির নেতাকর্মীদের
এই সরকার মুক্তি দেবে কিভাবে? এ কারণেই বিএনপিকে আগে তাদের অবস্থান ঠিক করা জন্যই পরামর্শ
দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে বিএনপি
বলছে যে, সমঝোতা-রাজনৈতিক আলোচনা হতে হবে তত্ত্ববধায়ক সরকার কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা
যায় তা নিয়ে এবং বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে একটা নির্বাচন কিভাবে দেয়া যায় তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে সেব্যাপারেই তারা আলোচনায় বসতে রাজি। অন্য কোন বিষয় নিয়ে বিএনপি আলোচনায়
আগ্রহী নয়।
আওয়ামী লীগ বিএনপি সমঝোতা রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন