দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও অতীত
পিছু ছাড়ছে না দিলোয়ারা ইউসুফ। অভিযোগ
রয়েছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় দিলোয়ারা ইউসুফের
বাবা নূর আহমেদ কেরানী
ও চাচা আলী আহমেদ
টি কে ছিলেন চিহ্নিত
এবং সক্রিয় রাজাকার। অথচ, তিনি দুই যুগের অধিক সময় থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা যায়, বুধবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে তিন নারীকে সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনীত করা হয়। তাদের একজন দিলোয়ারা ইউসুফ। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। স্থানীয়দের ভাষ্য—ফতেপুরের রাজাকার আলী আহমদ যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দেওয়া, নারীদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করে পেয়েছিলেন ‘টি কে’ পদবি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিল অনুযায়ী, ‘টি কে’ অর্থ ‘তকমায়ে খেদমত’। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে দেওয়া হতো বিশেষ এই উপাধি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, আলী আহমদ এতই দুর্ধর্ষ ছিলেন যে, স্বাধীনতার পরপরই ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা উপর্যুপরি পাথরের আঘাতে তার মাথা থেতলে হত্যা করেছিলেন। দিলোয়ারা ইউসুফের বাবা নূর আহমেদকেও এলাকা ছাড়া করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফেজ কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় আলী আহমেদ রাজাকার হিসেবে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেই এই ‘টি কে’ উপাধি পেয়েছিলেন। দিলোয়ারা ইউসুফের বাবাও ছিলেন রাজাকার। আমি একদিন বাসে করে যাচ্ছিলাম। এ সময় একই বাসে নূর আহমেদও ছিলেন। তিনি আমাকে হাটহাজারী থানায় ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। তিনি রাজাকার না হলে মুক্তিযোদ্ধাকে কেউ পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতে চায়? সেই পরিবারের মেয়ে হয়ে দিলোয়ারা ইউসুফ কীভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান?”
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই জেলা থেকে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েও পাননি। তাই হয়তো কারও কারও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’ তবে দিলোয়ারা ইউসুফের চাচা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ছিলেন, সেটা স্বীকার করেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (দিলোয়ারা) দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এতদিন তো তার ব্যাপারে কেউ আপত্তি তোলেনি, এখন কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘দিলোয়ারা ইউসুফ দলবিরোধী ভূমিকা রেখেছেন কি না, দলের জন্য দুঃসময়ে তার অবদান কী ছিল, সেই বিবেচনায় নারী আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী
লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিহিংসা থাকে।
চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই দলের
কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। তাই হয়তো কেউ
কেউ আমার বিষয়ে অপপ্রচার
চালাচ্ছে। যেসব বিষয়ে তারা
অপপ্রচার চালাচ্ছে তার কোনো ভিত্তি
নেই, সব ভুয়া। আমি
তো বহু বছর ধরে
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এগুলো
ঈর্ষাকাতরতা ছাড়া কিছু নয়।’
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।