আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে অন্তর্কলহ বন্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যে কোনও ব্যক্তি দলীয় পরিচয় ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আর এই কারণেই এবার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও তীব্র এবং তুমুল হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন উপজেলায় এমপি তাদের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে মাঠে নামিয়েছেন। অন্যদিকে, যারা এমপি হতে পারেনি কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, তারাও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে উপজেলা নির্বাচনে দাঁড় করানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তরুণরা তাদের নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য উপজেলা নির্বাচনকে বেছে নিয়েছেন। এ রকম একটি বাস্তবতায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের চার থেকে পাঁচ জন প্রার্থী গড়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগের সংঘাত-সহিংসতার তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সন্ত্রাস-সহিংসতার শঙ্কা করেছেন এবং এটি উদ্বেগজনকভাবে উপজেলা নির্বাচনের সময় বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তাদের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে পাঁচটি নির্দেশনা জারি করেছে।
১. কোনও এমপি কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারবেন না বা প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে পারবেন না।
২. আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কোনও প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবেন না বা প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
৩. কোনও প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বা এমপির মনোনীত প্রার্থী ইত্যাদি বলে প্রচারণা করতে পারবেন না।
৪. একজন প্রার্থী অন্য জন প্রার্থীকে অরাজনৈতিক ভাষায় গালাগালি করা বা যাতে দলের বদনাম হয় এমন কোন কর্মকাণ্ড করতে পারবেন না।
৫. কোনও প্রার্থী দলীয় পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ, তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সহ সভাপতি ইত্যাদি পরিচয় ব্যবহার ছাড়াই তাকে উপজেলা নির্বাচন করতে হবে। এবং, উপজেলা নির্বাচনে কেউ যদি সহিংসতা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, উপজেলা নির্বাচনে যদি সহিংসতার ঘটনা ঘটে এবং সেই সহিংসতার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তাদের শাস্তি কঠোরতর হবে। এক্ষেত্রে তাদেরকে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল বিভক্তি তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে দলকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার জন্যই আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, উন্মুক্ত উপজেলায় যদি আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হয়, সেটি কঠোর ভাবে দমন করা হবে।
আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেকটি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে, তা হলো উপজেলা নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি এবং জামায়াত অংশগ্রহণ করে, আর আওয়ামী লীগ যদি বিভক্ত হয়ে উপজেলা নির্বাচন করে সেটিও আওয়ামী লীগের জন্য একটি নেতিবাচক দিক হবে এবং নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যেতে পারে।
তবে, আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, যে তাদের প্রথম লক্ষ্য হলো, উপজেলা নির্বাচনকে উৎসবমুখর এবং অংশগ্রহণমূলক করা। এখানে শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন সন্ত্রাস-সহিংসতা বা অনিয়ম করে ভোট দখলের চেষ্টার ঘটনা না ঘটে। তাহলেই এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আরেকটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী প্রতীক কোন্দল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।