গতকাল অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় চলতি বছরের শেষ নাগাদ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠন এবং নেতৃত্ব পুর্নবিন্যাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে কাউন্সিল কবে হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ওপর। তারেক জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত কউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেন তবেই কাউন্সিল হবে। তবে বিএনপির তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্বের সবাই আগে দলের সাংগঠনিক পুর্নবিন্যাস চান, সংগঠনকে গতিশীল এবং শক্তিশালী করতে চান এবং সেই ক্ষেত্রে কাউন্সিলের কোন বিকল্প নেই বলেই তারা মনে করেন।
তবে গতকালের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এবং বিএনপির নীতি নির্ধারকদের একাধিক দফার আলোচনায় বিএনপির সম্মেলন এবং নেতৃত্ব নিয়ে ৩ রকমের মতামত পাওয়া গেছে এবং দলের মধ্যে এ নিয়ে স্পষ্ট বিভাজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যে তিনটি বিষয়ে দলের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে এবং জাতীয় কাউন্সিলের আগেই যে মতপার্থক্যগুলো নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন বিএনপি নেতারা মনে করেন তার মধ্যে হচ্ছে;
১. তারেক জিয়ার নেতৃত্ব: তারেক জিয়ার নেতৃত্বে থাকা না থাকা নিয়ে বিএনপিতে বিভাজন এখন সুস্পষ্ট হয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, যেহেতু তারেক জিয়া দন্ডিত, তিনি দেশে অবস্থান করছেন না একারণে তার সরাসরি নেতৃত্বে থাকা উচিত নয়। বরং এসময়ে নেতৃত্ব অন্য কারও ওপর তুলে দেওয়া উচিত। আবার এই মতের বিপরীতও আছে। তারা মনে করেন যে, তারেক জিয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবেই থাকা উচিত। দলের চেয়ারপারসন হিসাবে বেগম খালেদা জিয়ার থাকা প্রয়োজন এবং বেগম খালেদা জিয়া যেন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আর কেউ কেউ মনে করছেন যে, এখন যেভাবে তারেক জিয়া দল চালাচ্ছেন সেটি সর্বোত্তম পন্থা। তবে এ নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি এবং নানা রকম মতপার্থক্য গতকালের বৈঠকে দেখা গেছে।
২. নেতৃত্বের পরিবর্তন: নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়েও বিএনপির মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য দেখা গেছে। অনেকে মনে করেন যে, সিনিয়র যারা প্রবীণ হয়ে গেছেন, যারা দলের জন্য কাজ করতে পারছেন না নানা বাস্তবতায়। তাদের অলঙ্কারিত পদ দিয়ে মূল নেতৃত্ব অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং দক্ষদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তবে এ মতের বিরোধীতা করেছেন অনেক সিনিয়র নেতা। তারা মনে করেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কিংবা ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম-এর মত নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন দলকে সার্ভিস দিয়েছেন। এখন তারা অসুস্থ। মানবিক কারণেই তাদেরকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে অনুচিত এবং অবিবেচক সুলভ। একারণে তারা মনে করছেন যে, দলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৩. আন্দোলন: আন্দোলন নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন মতবিরোধ স্পষ্ট। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অব্যাহত রেখে আন্দোলন করা উচিত। কিন্তু দলের মধ্যে অনেক সিনিয়ররা বলেন যে, বাস্তবতা হল এই মুহুর্তে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার বা নতুন নির্বাচনের আন্দোলন হালে পানি পাবে না। এটি আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তারা মনে করছেন যে, এখন বিভিন্ন ইস্যু যেমন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দুর্নীতি ইত্যাদি সামনে নিয়ে এসে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন করা উচিত। তবে ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন বিএনপির মূল আন্দোলনকে ব্যাহত করতে পারে এমন মতামত দিচ্ছে অনেকে। আর বিএনপির আন্দোলনের কৌশল কি হবে এ নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মত পার্থক্য দেখা গেছে।
আর তাই কাউন্সিল নিয়ে বিএনপির মধ্যে যে ইস্যুগুলো মত পার্থক্য তা দূর না করে যদি কাউন্সিল অধিবেশন করে তাহলে দলের মধ্যে বিভক্তি আরও প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন