জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি। দেশের দু’টি বিরোধী দলই এখন ক্ষয়িষ্ণু
অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, এ দু’টি রাজনৈতিক দলেরই যেকোন সময়
মৃত্যু হতে পারে। তবে কার আগে মৃত্যু হবে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গবেষণা হতেই পারে।
দু’টি দলই এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, দু’টি দলের মধ্যেই এখন বিভক্তি। দু’টি দলই কোন্দলে
কোন্দলে জর্জরিত।
জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তারা মাত্র
১১টি আসনে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে সংরক্ষিত নারী আসনে আরও দুইটি আসন লাভ করে। এটি নিয়ে
বিরোধী দলে থাকার যোগ্যতা তাদের আসলে ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের কৃপায় জাতীয়
পার্টি বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হলেও জাতীয় পার্টিতে
নির্বাচনের পর পরই বড় ধরনের ভাঙ্গন ধরেছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি
অংশ আলাদা হয়ে গেছে। এরকম একটি বাস্তবতায় জাতীয় পার্টির অবস্থা যে এতই গুরুত্বহীন,
গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) ইফতার পার্টিতে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঢাকার পাঁচ তারকা অভিজাত
হোটেল শেরাটনে ডাকা এ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেউই যায়নি। কোন গুরুত্বপূর্ণ
কূটনীতিকরাও সে ইফতার পার্টিতে যোগ দেয়নি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব কমে যাওয়ার কারণেই কোন
রাজনৈতিক দল তাদেরকে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অনেকেই মনে করেন। জাতীয় পার্টির নেতা
জিএম কাদেরও ঐরকম ক্যারিশমেটিক নেতা নন যাকে দেখে সবাই আকৃষ্ট হবে এবং যিনি দলকে উজ্জীবিত
করতে পারবেন। বরং তিনি জাতীয় পার্টি নামক দলটিকে টিকিয়ে রাখাটাকে দুরূহ কাজ বলে মনে
করেন।
জাতীয় পার্টির চেয়েও বাজে অবস্থা এখন অবশ্য বিএনপির। যদিও বিএনপির একটি জনপ্রিয়তা রয়েছে। জনগণের মধ্যে বিএনপির একটা ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। জাতীয় পার্টির সাথে বিএনপির মৌলিক পার্থক্য হলো এই জায়গাটায় যে, জাতীয় পার্টিকে জনগণ পছন্দ করে না, জনগণের মাঝে তাদের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
আর অন্যদিকে বিএনপির অবস্থা ঠিক তার উল্টো। বিএনপির যারা কর্মী-সমর্থক,
তারা সবকিছুর পরও বিএনপির প্রতি তাদের সমর্থন এবং সহানুভূতি অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু
সমর্থক থাকলে কি হবে, নেতৃত্বের ব্যর্থতা, অধিকাংশ নেতার উদাসীন ভাবের জন্য জাতীয় পার্টির
মতো বিএনপিও এখন অস্তিত্বের সংকটে আছে।
জাতীয় পার্টি এখন রীতিমতো কোমায় চলে গেছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা। গত ২ মাসে অর্থাৎ ৭ই জানুয়ারীর নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত সময় জাতীয়
পার্টির কর্মকান্ড নেই বললেই চলে। এসময় জাতীয় পার্টি কী ধরনের কাজ করেছেন তা তাদের
নেতারাই অনুধাবন করতে পারেন না এবং নেতাদের কাছে এ নিয়ে একধরনের হতাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, একসময় মুসলীম লীগেরও অনেক কর্মী সমর্থক
ছিল। বিএনপিকে যারা সমর্থন করে তারা কেউই বিএনপির পক্ষে না, তারা আসলে আওয়ামী লীগের
বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে টিকে থাকতে না পারে, তাহলে
এ সমর্থকরা অন্য কোথাও যাবে। আর একারনেই মনে অনেকে মনে করেন, বিএনপির নেতৃত্বের সঠিক
নির্দেশনা এখন জরুরী এবং এটি যদি বিএনপি না দিতে পারে তাহলে বিএনপির অস্তিত্বও কালের
গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
তবে, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির মধ্যে কার আগে মৃত্যু হবে এ নিয়ে
অধিকাংশরাই মনে করেন যে, প্রথমে বা খুব সহসায় মৃত্যু হবে জাতীয় পার্টির এবং এরপর হয়ত
বিএনপির মৃত্যু জনগণ দেখবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।