নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০১৮
লন্ডনে তারেক জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যের হোম ডিপার্টমেন্ট। গতকাল এবং আজ দু-দফায় তাঁর বাসভবনে হোম ডিপার্টমেন্টের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বাতিল করার এটা প্রথম পদক্ষেপ। এই জিজ্ঞাসাবাদে মূলত তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণকারীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না হলে তাঁর প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তবে যুক্তরাজ্যে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারেক জিয়া রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবেদন করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্রিটেনে অবস্থিত দূতাবাসে গতকাল ২৭ এপ্রিল এই আবেদন পাঠানো হয়েছে। তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, সে লন্ডনেই থাকতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি তাঁকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে হয় সেক্ষেত্রে তারেক বাংলাদেশে ফিরে যেতে রাজি নয়। যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিলের আগেই যদি তাঁর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকার তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না। হোম ডিপার্টমেন্ট মূলত: ৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রথমত: বাংলাদেশ সরকার তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চেয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করেছে, যুক্তরাজ্যে বসে তারেক জিয়া বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। নান রকম সন্ত্রাসে উস্কানি দিচ্ছে। তাছাড়া তারেক জিয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত। তাঁকে দেশে ফেরত নেওয়া না হলে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত; যুক্তরাজ্যের অনেক নাগরিক এবং কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি অভিযোগ করেছেন যে, লন্ডনে বসে তারেক জিয়া যে সব শর্তে তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল সেই সব শর্ত ভঙ্গ করছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের অন্যতম শর্তই হলো যুক্তরাজ্য বসে রাজনীতির নামে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না।
তৃতীয়ত; তারেক জিয়া দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তাঁর কোনো বৈধ আয় নেই। জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত অর্থ তাঁর কোত্থেকে আসছে, তা নিশ্চিত না হয়ে তাঁকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেওয়া বিপজ্জনক।
চতুর্থত; তারেক জিয়ার সঙ্গে ব্রিটিশ সন্দেহভাজন জঙ্গি ও সন্ত্রাসীর রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সন্দেহভাজন একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারেকের যোগাযোগের খবর পেয়েছে।
পঞ্চমত; তারেক একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং তাঁকে অপসারণের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। যুক্তরাজ্যে তাঁর এ রকম কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু আলামত হোম ডিপার্টমেন্টকে দেওয়া হয়েছে।
তবে অভিযোগ যতই গুরুতর হোক, যুক্তরাজ্য থেকে তারেক জিয়াকে বহিষ্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এই প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে সে সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে বলা যায় না। অবশ্য, যুক্তরাজ্য হোম ডিপার্টমেন্টের একটি সূত্র বলছে, উত্থাপিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হলেই তারেক জিয়াকে ‘সীমাবদ্ধ চলাফেরা’র আওতায় আনা হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে দিতে অব্যাহত চাপ রাখার এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে। অবশ্য তারেক জিয়ার মতই মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেছিল। কিন্তু ভারতের অব্যাহত চাপে দাউদকে এরকম প্রত্যার্পন প্রক্রিয়া শুরু করলে দাউদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। ওই আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় দাউদকে যুক্তরাজ্য ভারতে ফেরাতে পারেনি। তারেক জিয়াও সম্ভবত দাউদের পথেই হাঁটছেন।
Read in English- https://bit.ly/2r6wVaB
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন