নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৭ মে, ২০১৮
গাজীপুরে ভোটের আগেই হেরে গেল আওয়ামী লীগ। ভোটের মাত্র ৯ দিন আগে হাইকোর্টের এক আদেশে নির্বাচন স্থগিত হবার ঘটনায় কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ। গণমাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে প্রচারিত হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এরকম ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, হারার ভয়েই বোধহয় আওয়ামী লীগ কায়দা করে নির্বাচন স্থগিত করিয়েছে। যদিও আজ বিএনপি প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রার্থীও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সত্যি সত্যি যদি আওয়ামী লীগ গাজীপুরে হারতো, তাহলেও এত ক্ষতি হতো না, যে ক্ষতি হলো নির্বাচন স্থগিত করায়।’ তিনি বলেন, ‘হারলে আমরা বলতে পারতাম যে, নিরপেক্ষ নির্বাচন আওয়ামী লীগই করতে পারে। নির্দলীয় সরকারের দাবিও অযৌক্তিক প্রমাণের আরেকটা সুযোগ ছিল আওয়ামী লীগের কাছে। কিন্তু ভোট বন্ধে এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে আওয়ামী লীগ হারবার ভয় পায়।’
এনিয়ে তফসিল ঘোষণার পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচন স্থগিত হলো। একটি গাজীপুর অন্যটি ঢাকা (উত্তর)। এর ফলে সারা দেশের ভোটারদের কাছে একটা বার্তা গেল যে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান। এজন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভয় পাচ্ছে। বিএনপি নেতারা তো গতকাল থেকে বলতে শুরু করেছে যে, ‘নির্বাচনে ভরাডুবি জেনেই আওয়ামী লীগ গাজীপুর নির্বাচন বন্ধ করিয়েছে। ঢাকা নির্বাচন বন্ধ করিয়েছে।’ কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে এটাও বলছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভরাডুবির আশঙ্কা থেকেই সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছে। এজন্যই বেগম জিয়াকে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে।’
জাতীয় নির্বাচন তো অনেক দূরের কথা। গাজীপুর নির্বাচন স্থগিতের আঁচ লেগেছে খুলনাতেও। খুলনাতেও বিএনপি এখন প্রচার করছে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভয় পায়। এজন্য খুলনার নির্বাচনও বন্ধ করার পায়তাঁরা চলছে।
গাজীপুরের ঘটনার আরেকটি দিক হলো, হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। হাসান উদ্দিন সরকারের বাসভবন ঘেরাও করে রাখে। এসব করে সরকার নির্বাচন বন্ধের সব দায়দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের এসব তৎপরতায় তার মহাজোট সঙ্গী জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। জাপার মহাসচিব তো বলেই ফেলেছেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি সংশয় দেখছেন।
আওয়ামী লীগ গত ৫ বছর যেভাবে নিরঙ্কুশভাবে দেশ চালিয়েছে, শেষ সময়ে এসে যেন তার হাতে রাখা নিয়ন্ত্রণের লাগাম আলগা হতে শুরু করেছে। এটা কি আওয়ামী লীগ বুঝে করছে না ভেতর থেকে কেউ স্যাবোটাজ করাচ্ছে? সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেশকিছু ঘটনাকে স্পষ্ট স্যাবোট্যাজ বলা যায়। যেমন বেগম সুফিয়া কামাল হল থেকে রাতে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে উঠিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য এলাকায় ঘটনা গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণ হালকা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। হঠাৎ করেই দেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। এসব লক্ষণ মোটেও ভালো নয়। প্রত্যেকবারই দেখা যায় ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে ক্ষমতাশীল দল একের পর এক ভুল করে। সেই ভুলের মাশুলও তাদের দিতে হয়। ৯১ এ মাগুরা ও মিরপুর উপনির্বাচন ছিল বিএনপির অবাঞ্চিত ভুল। ২০০১ সালে ডা. ইকবাল আর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলের কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে ড. ইয়াজউদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা, নির্বাচন কমিশনকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার মাশুল গুনতে হয়েছিল বিএনপিকে। গাজীপুর কি তেমনি এক ভুলের জন্মভূমি?
Read In English: https://bit.ly/2rvsuWm
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।