নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৩ মে, ২০১৮
কূটনীতিকরা বিএনপি নেতাদের কাছে বললেন, ‘লেট তারেক কাম, অ্যান্ড টেক দ্য লিডারশীপ। (তারেক দেশে এসে নেতৃত্ব নিক)।’ আজ বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশস্থ বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে, একজন কূটনীতিক এই মন্তব্য করেন। দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বেগম জিয়ার কারাজীবন এবং খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে বিএনপি। বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত সহ ১৭ টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন। এরপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরা কথা বলেন।
বৈঠকে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের পর একজন কূটনীতিক বলেন, ‘এই ব্রিফিংটা কেন? আপনারা যদি আমাদের অবহিত করার জন্য ব্রিফ করেন তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের দিয়ে যদি সরকারকে চাপ সৃষ্টির জন্য এই বৈঠক ডাকেন, তাহলে ‘সরি’। এটা হবে একটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। সেরকমটা কূটনীতিক শিষ্টাচার বিরোধী।’ এই বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অন্য দেশের একজন কূটনীতিক বলেন,‘ ফ্রাংকলি , বাংলাদেশ তো আর সেই অবস্থানে নেই।’ কূটনীতিকরা বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির চেয়ে বিএনপি কি ভাবছে, কি পরিকল্পনা এসব ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। কূটনীতিকরা জানতে চান, বিএনপি কি আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে? উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বেগম জিয়ার মুক্তি, সহায়ক সরকার এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার সাপেক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলেন। কূটনীতিকরা জানতে চান, সহায়ক সরকারের ফর্মুলাটা কি? জবাবে বিএনপি মহসচিব বলেন, ‘এটা আমরা যথাসময়ে দেব।’ এসময় একাধিক কূটনীতিক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলছে, অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে, আপনারা কি এই দাবি শুধু চাপ দেওয়ার জন্যই করছেন না?’ উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বটম লাইন হলো, আমরা চাই অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।’ এসময় কূটনীতিকরা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা নির্বাচনে না গেলে কীভাবে বুঝবেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হচ্ছে কি না।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। কিন্তু সরকার চেষ্টা করছে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যেন বিএনপি নির্বাচনে না যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব খুলনা সিটি নির্বাচনের কিছু ঘটনা উত্থাপন করেন। সেখানে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এসময় কূটনীতিকদের থেকে পাল্টা প্রশ্ন আসে, এরকম পরিস্থিতিতেও যদি আপনারা নির্বাচন করতে পারেন তাহলে জাতীয় নির্বাচন কেন করতে পারবেন না। তখন তো সারাদেশে নির্বাচন হবে, সরকারের কাজও সীমাবদ্ধ হবে? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি মির্জা ফখরুল। খুলনা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে কূটনীতিকরা জানতে চান ঐ নির্বাচনে যদি বিএনপি জেতে তখন কী বলবেন? মির্জা ফখরুল হাসতে হাসতে প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, ‘হোপ ফর দ্য বেস্ট।`
বেগম জিয়ার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে বলে মির্জা ফখরুল কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে কূটনীতিকরা জানতে চান, যদি আপিল বিভাগ তাঁকে জামিন না দেয় সেক্ষেত্রে কি করবেন? এবারও হেসে অন্য প্রসঙ্গে যান বিএনপি মহাসচিব।
দল চালাতে তারেক দেশে আসবেন কবে? কেন তিনি দেশে এসে আইনের মুখোমুখি হচ্ছেন না। তারেক যেহেতু দেশে আসছেন না, সেহেতু দেশে যারা আছেন তাদের কেউ বিএনপির হাল ধরতে পারেন না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতারা বেশ বিব্রত হন। বৈঠকের শেষ প্রান্তে কূটনীতিকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানায় এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপি যেন অংশ নেয় সেই অনুরোধ করে।
Read in English- https://bit.ly/2GbpIuE
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।