নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২২ মে, ২০১৮
৮২ সাল থেকেই বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কিছু ‘বিশ্বস্ত অনুগামী’ বেছে নিয়েছিলেন। যাঁদের বলা হতো বেগম জিয়ার ‘কাছের মানুষ’। এদের পদ-পদবী যাই হোক খালেদা জিয়ার কাছে এদের প্রবেশাধিকার ছিল অবারিত। বেগম জিয়ার বিশ্বস্ত হিসেবে এদের ক্ষমতা এবং প্রভাব ছিল অনেক বেশি। কিন্তু বেগম জিয়া দু:সময়ে এই সব কাছের মানুষদের খবর নেই। তাঁরা থেকেও নেই। বেগম জিয়ার জন্য এদের কোনো সহানুভূতির প্রকাশও আমাদের নজরে আসেনি।
মোসাদ্দেক আলী ফালু বেগম জিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্তদের একজন হিসেবে পরিচিত। ফালু রাজনীতিতে আলোচিত হয়েছেন বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই। বেগম জিয়া রাজনীতিতে আসেন এক কঠিন সময়ে। এ সময় বিএনপিতে বিভক্তি আর কোন্দল। প্রায়ই এসব কোন্দল মারামারি আর সংঘর্ষে রূপ নিতো। এ সময়ই মির্জা আব্বাস নিয়ে আসেন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। ফালু বেগম জিয়ার একান্ত সচিব কাম দেহরক্ষী হিসেবেই কাজ করেন দীর্ঘদিন। কাজ এবং বিশ্বাস দিয়ে তিনি বেগম জিয়ার আস্থা অর্জন করেন। ৮০’র দশকে ফালু ছিলেন বেগম জিয়ার সার্বক্ষণিক ছায়াসঙ্গী। ৯১ এ ক্ষমতায় এলে ফালুকে করা হয় একান্ত সচিব-১। এনিয়ে সেই সময় কম হৈ চৈ হয়নি। কিন্তু এসব সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে বেগম জিয়া ফালুর ওপর নির্ভরতা বাড়াতেই থাকেন। ৯১ এ অনেক মন্ত্রীও ফালুকে খাতির করতো বেগম জিয়ার আনুকূল্য পাবার জন্য। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বেগম জিয়াকে তারেকের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হয়। এ সময় তারেক জিয়া হারিছ চৌধুরীকে পাঠান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাজনৈতিক সচিব-১ হিসেবে। মনখারাপ করে ফালু সরে যেতে উদ্যোগ নিলে বেগম জিয়া তাঁকে মান ভাঙান। আরও একটি রাজনৈতিক সচিবের পদ সৃষ্টি করে ফালুকেও কাছে রাখেন। কিন্তু তারেকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ফালুর ‘রাজনৈতিক সচিব’ জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। এর মধ্যেই অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে বিকল্প ধারা নামে নতুন দল গঠন করেন। নতুন দলে যোগ দেন বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত তেজগাঁও-রমনার এমপি মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান। ফালুকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাবার মোক্ষম অস্ত্র পান তারেক। উপ-নির্বাচনে তেজগাঁও -রমনার প্রার্থী বানান ফালুকে। এরপরই বিএনপির রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন ফালু। কিন্তু বেগম জিয়ার সঙ্গে ফালুর ব্যক্তিগত সম্পর্কে এতটুকু চিড় ধরেনি। বরং সৌদি আরবে ওমরাহ বা হজে ফালুই ছিলেন বেগম জিয়ার সঙ্গী। ওয়ান ইলেভেনে ফালু গ্রেপ্তার হন। এ সময় এনটিভি ভবনে আগুন লাগলে বেগম জিয়া নিজে সেখানে গিয়েছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে মোসাদ্দেক আলী ফালু অন্য মানুষ হয়ে যান। তাঁর বিজনেস পার্টনার হন আওয়ামী লীগ নেতা এবং বিতর্কিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান। রাজনীতি বাদ দিয়ে ব্যবসায় মনোযোগ বেশি ফালুর। মাথায় বেশ কটা দুর্নীতির মামলা থাকলেও কিছুই স্পর্শ করে না তাঁকে। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা বলা হয় তাঁকে। ২০১৬ সালের কাউন্সিলে তাঁকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হলে, তিনি পদত্যাগ পত্র পাঠান। কিন্তু সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। বিএনপির ৩৬ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ২১ তম মোসাদ্দেক আলী ফালু। তবে দলের কাজকর্মে তিনি নেই। বেগম জিয়া যখন কারাগারে তখন ফালুর নিস্পৃহতায় অবাক অনেকে। যার জন্য ‘বিজনেস টাইকুন’ হিসেবে ফালুর উত্থান, তিনিই ভুলে গেছেন বেগম জিয়াকে?
বেগম জিয়া রাজনীতিতে আসার পর যাঁদের নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। বিএনপির অনেকেই বিশ্বাস করে, বেগম জিয়ার প্রশ্রয়েই ঢাকায় মির্জা আব্বাসের রাজত্বের অবসান হয়ে খোকার রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। ২০০১-০৬ সালে খোকা হয়েছিলেন বেগম জিয়ার টাকা বানানোর মেশিন। মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র এক সঙ্গে উদযাপনে অদ্ভুত সুযোগ খোকা পেয়েছিলেন বেগম জিয়ার জন্যই। খোকা বিএনপিতে কাউকে পাত্তা দিতেন না, যেকোনো বিষয়ে সরাসরি চলে যেতেন বেগম জিয়ার কাছে। ওয়ান ইলেভেন খোকার গ্রেপ্তার না হওয়াটা যেমন ছিল বিস্ময়কর, তারচেয়েও বিস্ময়কর ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিন বছরের বেশি সময় বিনা নির্বাচনে অখণ্ড ঢাকার মেয়র থাকা। এতেও বেগম জিয়ার স্নেহ বঞ্চিত হননি খোকা। বরং ঢাকার জন্য খোকার দিকেই তাকিয়ে থাকতেন। এরপর খোকা চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তাঁর ক্যানসার চিকিৎসা চলছে। সর্বশেষ আলোচনায় ছিলেন নাগরিক ঐক্যের নেতা মান্নার সঙ্গে টেলিআলাপের জন্য। দুষ্ট লোকেরা বলে এই টেলি আলাপ খোকাই নাকি ফাঁস করেছিলেন। কাগজে কলমে খোকা বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান। কিন্তু বেগম জিয়া গ্রেপ্তারের পর একটা বিবৃতিও দেননি খোকা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পছন্দে। দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আর মুখ্য সচিব ছিলেন ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। অনেকেই বলেন, রাষ্ট্রাচার এবং ফাইলপত্র কীভাবে দেখতে হয় তা বেগম জিয়াকে হাতে কলমে শিখিয়েছেন ড. কামাল সিদ্দিকী। তারেক মামুনের আপত্তিতে বেগম জিয়া অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেও ড. কামাল উদ্দিনকে বাদ দেননি। দ্বিতীয় মেয়াদে বেগম জিয়ার পতনের পর ড. কামাল সিদ্দিকী বিদেশে পাড়ি জমান। বর্তমানে মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। জিয়া এতিম খানা মামলায় বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁরও ১০ বছরের জেল হলেও তিনি দেশে এসে আত্মসমর্পণ করেননি। আইনজীবীরা বলছেন, তাঁর একটি বক্তব্য পেলেই এই মামলায় বেগম জিয়া খালাস পেয়ে যেতেন।
ফান্ডের টাকার হাতবদল হয়েছে তাঁর স্বাক্ষরিত চেকে। বিএনপির আইনজীবীরা তাঁকে কয়েক দফা অনুরোধ করলেও, এই টাকা হস্তান্তরের সঙ্গে বেগম জিয়া জড়িত নন মর্মে জবানবন্দি দেননি এই আমলা। বেগম জিয়ার বিশ্বস্ত হলেও এখন তিনি বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য কিছুই করলেন না।
এরকম অনেক কাছের মানুষই এখন বেগম জিয়ার দু:সময়ে তাঁর থেকে দূরে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে একদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায়
নেওয়া হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরবেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন,
‘ম্যাডামকে আজকে বাসায় আনার কথা রয়েছে। তবে এখনও সময় নির্ধারণ হয়নি’।
এর আগে, বুধবার (০১ মে) সন্ধ্যায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া
হয়। সেখানে সিসিইউতে রেখে তার বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়।
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পবিত্র ওমরাহ পালনের
উদ্দেশ্য সৌদি আরব যাচ্ছেন। সঙ্গে থাকছেন তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) দুপুর সোয়া ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমান বন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে তাদের ঢাকা ছাড়ার
কথা রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে আগামী ৮ মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে বাংলাদেশ
থেকে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বুধবার (০১ মে)
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সাতটি ধাপে জাতীয়
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই নির্বাচনে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি ও
প্রচারণা দেখানোর জন্য বিদেশি কিছু রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে
একমাত্র আওয়ামী লীগকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ভারতে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। অন্যদিকে,
বাংলাদেশে পরপর চারটি জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে
জয়লাভ করে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে
যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন পুরো পৃথিবীকে অবাক করেছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ
গণতন্ত্র ভারত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যে আস্থাশীল এবং
আওয়ামী লীগকে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রকৃত বন্ধু
মনে করে, এই আমন্ত্রণ সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে
অনুরোধ করেছে।
এই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে দলের
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ভারত সফরে
মনোনীত করেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, এই সফরটি মূলত পাঁচ দিনের। ১
মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত। সফরে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধির সঙ্গে বিজেপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের
বৈঠক রয়েছে। দিল্লির বাইরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা সরেজমিনে দেখানোর জন্য বিজেপি
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিকে ছত্রিশগড়ে নিয়ে যাবে।
ভারতের নির্বাচন ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে যা ১ জুন পর্যন্ত চলবে।
৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষিত হবে।
ভারত নির্বাচন বিজেপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন