নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৩ মে, ২০১৮
জাতির পিতার হাতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ সংগঠনটি। সংগঠনটির বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, ছাত্রলীগ আর আগের ছাত্রলীগ নেই। এর মধ্যে শিবির এবং ছাত্রদলের অনুপ্রবেশকারী ঢুকে গেছে। শিবির-ছাত্রদল ঠেকাতে চলছে চিরুনি অভিযান, ঠিকুজি খোঁজা হচ্ছে প্রস্তাবিত নেতাদের। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগে আদর্শ বিবর্জিতদের অনুপ্রবেশ কি একটি নতুন প্রবণতা? নাকি ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার এ এক কৌশল?
বাংলা ইনসাইডারের গবেষণায় দেখা যায়, এটি বহু পুরোনো ধারা। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ২৭ টি কমিটি হয়েছে। ২৭ জন সভাপতির ৫ জনই এখন বিএনপির নেতা। ২৭ জন সাধারণ সম্পাদকের ৩ জন এখন বিএনপির রাজনীতির নীতি নির্ধারক। অথচ আওয়ামী লীগ আর বিএনপির আদর্শ দুই মেরুতে। জাতির পিতার রক্তের উপর দিয়েই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত। এই দলটি জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল, এখনো জাতির পিতাকে স্বীকার করে না। বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধিদের প্রধান সংগঠন।
বাংলা ইনসাইডারের গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। শাহ মোয়াজ্জেম যে কমিটির সভাপতি তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি। সভাপতি হবার আগে শাহ মোয়াজ্জেম ১৯৫৭-৬০ সালে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। শাহ মোয়াজ্জেম বাংলাদেশ ডিগবাজির রাজনীতির অন্যতম বিজ্ঞাপন। রাজনীতিতে অশ্লীলতাও কুরুচিপূর্ণ কথার প্রবর্তক তিনি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার রক্তের উপর দিয়ে তিনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান। ৮২’তে ডিগবাজি দিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এসময় ‘দুর্গন্ধময়’ কথার জন্য তিনি ছিলেন আলোচিত। সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৬৩ সাল থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং জেল হত্যায় আওয়ামী লীগের যারা ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে পরিচিত তাঁদের মধ্যে কে. এম. ওবায়দুর রহমান ছিলেন অন্যতম। ওবায়দুর রহমান পরবর্তীতে বিএনপির মহাসচিব হন। বিএনপিতেও এক সময় তাঁর জায়গা হয়নি।
১৯৬৭-৬৮ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। কোরেশী যে সময় ছাত্রলীগের সভাপতি তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক। ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীও বিএনপির নেতা হয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনে সেনা সমর্থিত কিংস পার্টি করে আলোচিত হন। এখন একটি প্যাড সর্বস্ব দলের নেতা তিনি। ১৯৭০-৭২ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাজাহান সিরাজ। অবশ্য ৭২ এ তিনি জাসদে যোগ দেন। বর্তমানে অসুস্থ এই নেতা এখনো বিএনপি আছেন।
১৯৭৩-৭৪ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। এই সময় সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শফিউল আলম প্রধান। মনিরুল অনেক ঘাটের পানি খেয়ে এরশাদের জাপা থেকে বিএনপিতে এসে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। আর শফিউল আলম প্রধান তো বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার এক মাইক্রোফোন। একটা নাম সর্বস্ব দল করে বিএনপির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছেন নিজেকে। ৮৮ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন হাবিবুর রহমান হাবিব। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি আলোচিত হন। ৯১ এর নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়েই তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এখন বিএনপির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।
এতো গেল শুধু সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রে। এরকম বহু নেতা কর্মী আছেন যারা ছাত্রলীগ থেকে জাতীয় রাজনীতিতে এসে বিচ্যুত হয়েছেন। অতীতেও এটা ছিল ভবিষ্যতেও এটা থাকবে। আসল কথা হল আদর্শ। যেমন টা জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আদর্শ না থাকলে একজন রাজনীতিবিদের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।’ তাই সব সময়ই আওয়ামী লীগে মোশতাক, মোয়াজ্জেমরা থাকবেই। আর এটা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো আদর্শিক মান উন্নত করা। তবে মজার ব্যাপার হলো, ছাত্রলীগ থেকে যারা বিএনপিতে গেছেন, তাদের কারও পরিণতিই সম্মানজনক হয়নি।
Read in English- https://bit.ly/2s8AOLX
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন