নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ৩০ মে, ২০১৮
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর তিনজোট সর্বসম্মতভাবে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে। বাংলাদেশে শেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালে। সাবেক আমলা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছিলেন। এটাই ছিল শেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৮ বছরে বাংলাদেশ ৬ জন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান পেয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনই মারা গেছেন। প্রথম এবং শেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বেঁচে আছেন। কিন্তু বেঁচে থাকলেও এরা দুজনই স্বেচ্ছা নির্বাচনে। এক জন দেশে এবং একজন বিদেশে থাকলেও দুজনই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকেন। ৪ জন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান যারা মারা গেছেন, তাঁদের একজন ছাড়া বাকি তিনজনই নানাভাবে বিতর্কিত ছিলেন। দায়িত্ব শেষ করে তারাও অন্তরালের জীবন বেছে নিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় কোনো নির্বাচনই ত্রুটিমুক্ত হয়নি। প্রত্যেক নির্বাচন নিয়েই হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে। তবে ৫ জন এই দায়িত্ব শেষে ‘গণশত্রুতে’ পরিণত হন।
৯০ এ এরশাদের পতন হয়। এরশাদের পতনের পর তিনজোট ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে মনোনীত করেন। কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শর্ত দেন যে, নির্বাচনের পর আবার তাঁকে স্বপক্ষে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনজোট এই শর্তে রাজি হয়। নির্বাচনের পর সংবিধান সংশোধন করে তাঁকে স্বপদে (প্রধান বিচারপতি পদে) ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপ্রধান করা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে সরকারের নানা বিষয়ে মত পার্থক্য হয়। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সরকারকে বিব্রত করে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসরে যান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন। এরপর থেকেই তিনি পর্দার আড়ালে চলে গেছেন। এখন ৮৮ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন আহমেদ কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না। সারাদিন অবসর সময় কাটান।
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে নির্বাচন করে, তাতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। বিএনপির কাছে ভিলেন হয়ে যান বিচারপতি রহমান। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপি শোকবানী পর্যন্ত দেয়নি। তবে দায়িত্ব শেষ করার পরও বিচারপতি এম এইচ রহমান শিল্প ও সাহিত্যে সরব ছিলেন।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন বিচারপতি লতিফুর রহমান। তিনিও নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কাছে ‘বেঈমান’ হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর মৃত্যুতেও আওয়ামী লীগ কোনো শোক জানায়নি।
২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। ইয়াজউদ্দিন সম্ভবত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তাঁর হাতে ধ্বংস হয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি কেউই শোক জানায়নি।
২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়েছিলেন। ২০০৮ এ নির্বাচন শেষে ২০০৯ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন। বাঙালিদের তিনি এড়িয়ে চলেন। দেশে আসতেও রাজি নন। বিএনপির কাছে তিনি হলেন গণশত্রু।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কেউই যে সম্মান নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, দায়িত্ব ছাড়ার সময় সেই সম্মান ধরে রাখতে পারেননি।
Read in English- https://bit.ly/2soH8PB
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।