নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ১১ জুন, ২০১৮
আকস্মিকভাবে বিএনপি মহাসচিবের ভারত প্রেম, সুশীল সমাজের সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের বৈঠক রাজনীতিতে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ভারত থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ছে। ঐ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভারতকে যা দিয়েছি, তা কোনোদিন তাঁরা ভুলতে পারবে না। কূটনীতিক পাড়ায় খবর হলো, ভারতের একটি মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐ বক্তব্যকে ভালো চোখে দেখছে না। ভারতের কূটনীতিকরা বলছেন, ’৭১ এ ভারত বাংলাদেশকে যা দিয়েছে, তা কি বাংলাদেশ ভুলতে পারবে?’ঐ বক্তব্য ছাড়াও ২০০১ এর নির্বাচনে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য ভারত খুবই ‘স্পর্শকাতর’ মনে করছে। এজন্যই কি বাংলাদেশে ভারত বিকল্প খুঁজছে? নাকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষের সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখি করছে? রাজনীতির অঙ্গনে এই প্রশ্নগুলো এখন ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ভারত আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ বিএনপির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। সেখানে বিএনপি নেতারা বিজেপি নেতা ছাড়াও ভারতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যান ব্যাংককে। বিবিসির সঙ্গে গত রোববারের সাক্ষাৎকারে ফখরুল নিজেই স্বীকার করেছেন, ভারতে বিএনপি লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছেন। একাধিক সূত্র বলছে, ব্যাংককে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ না দেওয়াসহ ৫ টি অঙ্গীকার করেছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ। একটি সূত্র বলছে, এই পাঁচ অঙ্গীকারে সন্তুষ্ট হয়নি ভারত। তারা তারেক জিয়াকে দলের নিষ্ক্রিয় করা এবং জামাতকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। কিন্তু, এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি ফখরুল। তিনি এজন্যই লন্ডনে গেছেন।
কূটনীতিক সূত্রের খবর হলো, শুধু বিএনপি নয়, গত দুই সপ্তাহে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস এবং মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা একাধিক রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও দুজন সম্পাদক এবং কয়েকজন সিভিল সোসাইটির ব্যক্তির সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে।
একটি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগকে ভারত ব্লাঙ্ক চেক দিয়েছে, এই ধারণাটি তাঁরা পাল্টাতে চায়। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ ভেবেই নিয়েছে তাদের কোনো বিকল্প ভারতের কাছে নেই, এই ধারণাটিও ভ্রান্ত প্রমাণ করতে তারা তৎপর। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার উত্থান এবং বিশ্বব্যাপী তাঁর সুনাম ভারতের একটি অংশের পছন্দ নয়।
বাংলাদেশে ভারত একজন বিশ্বনেতার আবির্ভাব দেখতে চায় না। কেউ কেউ এমনও বলছে, ভারত কোনো প্রতিবেশীর বিস্ময়কর উত্থান ও সাফল্য পছন্দ করে না। এজন্যই বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনীতি আর শক্তিশালী সরকার তাঁদের অনেকের পছন্দ নয়। তবে, এর বিপরীতে চিন্তাও আছে, কারও কারও ধারণা, ভারত এসব কিছুই করছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।