নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ জুন, ২০১৮
চুপিসারে লন্ডনে গেলেন, ফিরলেনও নীরবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠক করে তিনি দেশে এলেন বলেই জানিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের। কিন্তু দলের নেতাদের সুনির্দিষ্ট করে তিনি বলছেন না, কী পেলেন লন্ডন থেকে?
গতকাল দেশে ফিরেই মির্জা ফখরুল টেলিফোনে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলেন। যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের একজন জানিয়েছেন, ‘লন্ডনে তারেক-ফখরুলের বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে।’ টেলিফোনে ফখরুল ঐ নেতাকে বলেছেন, বেগম জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর দল যেভাবে চলছে তাতে তারেক সন্তুষ্ট। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও তারেক সম্মতি প্রকাশ করেছেন বলেও জানিয়েছেন।` ফখরুল ঐ নেতাকে বলেছেন, `তারেক জিয়া দলের ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।’
প্রকাশ্যে এসব বললেও, গোপনে ‘ফখরুল’ লন্ডন সফরের পর বেশ উল্লসিত। অনেকটা বিজয়ী ভাব। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির করণীয় একটি রোডম্যাপ নিয়ে তারেক জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। আর এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির ফ্রি-হ্যান্ড চেয়েছিলেন। অর্থাৎ দল চালাতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পূর্ণ কর্তৃত্ব চেয়েছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে যদি বিএনপিকে তিনি ক্ষমতায় আনতে না পারেন, তাহলে সরে দাঁড়াবেন’। বিএনপি মহাসচিবের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মির্জা ফখরুল ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির রণকৌশল তৈরি করেছেন।‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ বলতে বোঝানো হয়েছে, বেগম জিয়া জেলে থাকবেন, সিনিয়র অনেক নেতাই নির্বাচন করতে পারবেন না, তারেক লন্ডনেই থাকবে।’ মির্জা ফখরুলের রাজনৈতিক কৌশলপত্রে ‘এরকম পরিস্থিতিতে সকল সমমনা শক্তির বৃহত্তর নির্বাচনী ঐক্য একটি আন্দোলনে রূপ নিতে পারে বলে বলা হয়েছে।’ সূত্র মতে, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী সহ যাঁদের ব্যাপারে তারেক জিয়ার আপত্তি আছে, তাদের ব্যাপারেও বিএনপি মহাসচিব কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল বুঝিয়েছেন, এখন আওয়ামী লীগকে হটানোই বড় কথা। সেজন্য সবাইকে এমনকি এরশাদকেও সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। এজন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত মির্জা ফখরুল তারেক জিয়াকে নিষ্ক্রিয় থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তারেক জিয়া বিএনপি মহাসচিবের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। বেগম জিয়া মুক্তি না পেলে, তারেক দলের নামমাত্র ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর এসময় বিএনপিতে কায়েম হবে ‘ফখরুল তন্ত্র’। আর ঈদের ছুটিতেই বৃহত্তর ঐক্যের জন্য কাজ শুরু করবেন বিএনপি মহাসচিব।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন