নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ পিএম, ১৮ জুন, ২০১৮
সরকার জেনারেল আজিজ আহমেদকে দেশের ১৬তম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আগামী ২৫ জুন থেকে তাঁর এই নিয়োগ কার্যকর হবে। তিনি বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর নিয়োগ। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই, প্রধান বিরোধী দলসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বক্তব্যে, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনো দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দেশের মানুষের অন্যতম আস্থার প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েনে ঘাত-প্রতিঘাতে সেনাপ্রধানদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। অনেক সেনা প্রধান অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে জড়ান।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সেনা প্রধান এম এ জি ওসমানী। ১৯৭১ এ ১২ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। ৬ এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে এম এ জি ওসমানী রাজনীতিতেও জড়িয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনাপ্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কাজী এম সফিউল্লাহ। ৭ এপ্রিল ১৯৭২ সালে তিনি সেনা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। দায়িত্বে ছিলেন ২৪ অগাস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত। তিনি সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট একদল বিপথগামী সেনা সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যা করে। অনেকেই মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকে ব্যর্থ সেনাপ্রধান মনে করেন। কেউ কেউ তাঁকে `কাপুরুষ` হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। সফিউল্লার পর সেনাপ্রধান হন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হন মূলত সামরিক ক্যুদেতার মাধ্যমে। তিনি সেনাপ্রধান হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেনা পোশাকে বঙ্গভবন দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে দল গঠন, অন্য রাজনৈতিক দল গঠন, সেনা অভ্যন্তরে হত্যা, ক্যু এর ধারা সূচনা করেন জেনারেল জিয়া। জিয়া ১৯৭৮ সালের ২৯ এপ্রিল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে দেশের চতুর্থ সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এরশাদও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেনাবাহিনীকে তাঁর ক্ষমতা দখলের কাজে ব্যবহার করেন। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে দল গঠন করেন। এরশাদ পুরোদস্তুর রাজনীতিতে প্রবেশ করে সেনা প্রধানের পদ ছাড়েন। নতুন সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় লে. জেনারেল আতিকুর রহমানকে। জেনারেল আতিক ৩১ সে অগাস্ট ১৯৮৬ সালে সেনা প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে ৩০ অগাস্ট ১৯৯০ সালে অবসরে যান। বাংলাদেশের সেনা প্রধানদের মধ্যে তিনি প্রথম যিনি সেনাপ্রধান থেকে এবং অবসরে যাবার পরে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। জেনারেল আতিকের পরে সেনাপ্রধান হন, লে. জেনারেল নুরুদ্দিন খান। ৩১ আগস্ট ১৯৯০ তে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরশাদের পতনের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেনাপ্রধান অবস্থায় তিনি রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এরশাদের প্রতি সেনা অনাস্থা জানান। এরপর এরশাদের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। জেনারেল নুরুদ্দিন অবসরে যাবার পরে, বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার দেশের সপ্তম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন লে. জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে। ৩১ আগস্ট ১৯৯৪ তে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পান। কিন্তু বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেনারেল নাসিম তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। সেসময় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করেন। এসময় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিচক্ষণ হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ২০ মে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান লে. জেনারেল মো. মাহাবুবুর রহমান। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে জেনারেল মাহাবুব অবসরে যান। এর পরেই তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এখন তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ প্রথম এবং দেশের ৯ম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে। জেনারেল মোস্তাফিজ সেনাপ্রধান ছিলেন ৩ বছর। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে দায়িত্ব নিয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০০ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেই ছিলেন। দেশের ১০ম সেনাপ্রধান হন লে. জেনারেল এম. হারুন-অর-রশীদ। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পেয়ে তিনি বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে ১৫ জুন ২০০২ সালে অবসরে যান। এরপর সেনাপ্রধান হন লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী। ওয়ান ইলেভেনে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এভাবেই সেনা রাজনীতি সম্পর্কে একটি বিযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের ১৬ জুন জেনারেল মঈন ইউ. আহমেদ সেনাপ্রধান হবার পর আবার রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলা হয় সেনাবাহিনীকে। জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ, ২২ জানুয়ারি ২০০৭ এর নির্বাচন বন্ধে এবং ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসময় জেনারেল মঈন হয়ে ওঠেন ‘অঘোষিত’ সরকার প্রধান। তবে জিয়া বা এরশাদের মতো তিনি ক্ষমতা দখল করতে পারেননি। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে ১৫ জুন ২০০৯ সালে তিনি অবসরে যান। জেনারেল মঈনের পর আরও তিনজন সেনাপ্রধান পেয়েছে দেশ। যারা তাঁদের পেশাদারিত্বে মান দিয়ে সেনাবাহিনীকে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ নিয়োগ করেন। রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধ্বে নিয়ে যান সেনাবাহিনীকে। এরা হলেন জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবিন, জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া এবং জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিকুল হক। এদের মধ্যে জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচনে সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বে এক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। নির্বাচনের ৬ মাস আগে দায়িত্ব নিচ্ছেন নতুন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কি হবে? তা নির্ধারণে নেতৃত্ব দেবেন নব নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।