নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ জুন, ২০১৮
১৪ দলের শরিকদের জন্য ৫০ আসন রেখে আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে, আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত তালিকায় সম্ভাব্য দুটি বিকল্প রাখা হয়েছে। বিএনপি যদি পূর্ণ শক্তি নিয়ে নির্বাচন করে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর মতো মহাজোট করে নির্বাচনে যাবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচন করবে। এরকম প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ আসন ছেড়ে দেবে। আর বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত খন্ডিতভাবে নির্বাচন করে বা নির্বাচনে অংশ না নেয় সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটকে নিয়েই নির্বাচন করবে। জাতীয় পার্টি তখন আলাদা নির্বাচন করবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। ঐ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাদের করণীয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অন্তত ১২টি নিজস্ব জরিপ, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঐ তালিকায় ৩০ থেকে ৫০টি আসনে কৌশলগত কারণে বিকল্প প্রার্থীও রাখা হয়েছে। এই আসন গুলোতে একাধিক প্রার্থী সমান জনপ্রিয়। কে জয়ী হবেন তা নির্ভর করবে ঐ আসনে প্রতিপক্ষের প্রার্থী কে হবেন তার উপর। এই আসন ছাড়াও অন্তত ১০০ থেকে ১২০ টি আসনে আসছে নতুন মুখ। ২০১৪ বা ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছেন, তাদের বদলে ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে ঐ দুই নির্বাচনে যারা হেরেছেন, তারা কেউই মনোনয়ন তালিকায় নেই। বেশ কিছু আসনে বিতর্কিত এবং এলাকায় জনপ্রিয়তা হারানো প্রার্থীরা চূড়ান্ত হওয়া তালিকায় নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যে ১০০/১২০টি আসনে নতুন মুখদের মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই স্ব স্ব পেশায় জাতীয় ভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। নতুন মুখ ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় নতুনদের জয়-জয়কার থাকছে। তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবার আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরুণদের মনোনয়ন দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। তরুণ ছাড়াও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য থাকছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায়। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর আসনগুলোতে স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ঢাকায় মাত্র ৩/৪ জন পুরোনো প্রার্থী আবার মনোনয়ন পেতে পারে পারেন। বাকি আসনগুলো চলে যাবে বিজনেস টাইকুনদের হাতে।আওয়ামী লীগের খসড়া তালিকায় বিতর্কিত হবার পরও ‘জনপ্রিয়’ হবার কারণে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিও মনোনয়ন পাচ্ছেন। কক্সবাজারে মাদকের কারণে বিতর্কিত একজন সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাচ্ছেন বলেই খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে নারায়ণগঞ্জেও বিতর্কিত একজন আলোচিত এমপিও আবার মনোনয়ন পাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পাশাপাশি প্রতিটি আসনে বিরুদ্ধাচারণকারী কিংবা দলীয় কোন্দল সৃষ্টির হোতাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। দলের সভাপতি এদের কোন্দল না করার সতর্কবার্তা দেবেন।
Read in English- https://bit.ly/2M4WKQu
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন