নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৫ জুলাই, ২০১৮
আজ থেকে ৯ বছর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন নিজের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তখন বিএনপি-জামাতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি রাজনৈতিক ইস্যু। জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করে দিতে, দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করতে এটি আওয়ামী লীগের গৃহীত একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। কিন্তু এটি আসলে ছিল বাঙালির ৪০ বছরের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের উদ্যোগ। একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যেসব অপকর্ম জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা করেছিল সেসব অপকর্মের বিচার হওয়া প্রয়োজন ছিল বাঙালি জাতিসত্ত্বার জন্য, বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এবং বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য। আর সে কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
গত ৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখব, এতে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দলটির নাম জামায়াতে ইসলামী। তাদের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা যুদ্ধাপরাধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন হয়ে হয় মৃত্যুদণ্ড, নয়তো কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন দলনেতা বা আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী আপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন যা ২০১৬ সালের ১১ই কার্যকর করা হয়। পাবনা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নিজামী এক সময় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের কৃষি ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ পদধারী নিজামীর মতো একই ভাগ্য বরণ করতে হয় দলটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী আলী আহসান মুজাহিদকেও। ফরিদপুরের রাজনীতিবিদ জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সচিব মুজাহিদকে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ গণহত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা, নির্যাতন ইত্যাদিসহ মোট উত্থাপিত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী সাব্যস্ত করে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এ আদেশ ২০১৫ সালের ২২শে নভেম্বর কার্যকর করা হয়।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামাতের মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লা। কাদের মোল্লা ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। ফরিদপুর থেকে নির্বাচন করে দুইবার পরাজিত হওয়া কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথমে ৩৪৪ জন নিরীহ ব্যক্তি হত্যা ও অন্যান্য অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন করাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডাদেশের নির্দেশ দেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক জামাত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন দলটির নায়েবে-আমির বা ভাইস প্রেসিডেন্ট। ধর্মীয় নেতার ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে তিনি দেশের নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে, বিশেষ করে নিজের নির্বাচনী এলাকা পিরোজপুরে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজ ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। এই রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হলে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিলের রায় পর্যবেক্ষণ করে ফাঁসির সাজা কমিয়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদাণ করেন। এখন সাঈদী কারাগারেই আছেন।
কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এত বিপর্যয়ের পরও দলটি কিন্তু মোটেই দুর্বল হয়নি। ধারণা করা হচ্ছিল, এত প্রথম সারির নেতার মৃত্যুদণ্ড বা কারাদণ্ডের পর জামাত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সংগঠিত করে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন নেতা। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের পরও দেশের শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছিলেন জামাত আর বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। জামাত এখনও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, বাংলাদেশের জন্য এবং বাঙালি জাতিসত্ত্বার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে টিকে আছে।
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আবারও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ও সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলো জামাতকে অবহেলা করার মতো ভুল করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি একটি ক্ষতিকর প্রবণতা। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলেন কিংবা যারা দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত তাঁরা মনে করছেন জামাত দুর্বল হয়ে গেছে, শক্তিহীন হয়ে গেছে। এমনকি জামাত শেষ হয়ে গেছে বলেও অনেক সময় মন্তব্য করা হয়। কিন্তু এই চিন্তাটি সম্পূর্ণ ভুল।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, আমরা যে কোনো কাজ অর্ধেক সম্পন্ন করে রেখে দেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমেই যে কাজটি করা জরুরী ছিল তা হলো একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। কিন্তু দেখা গেছে, সেসময় যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে ঘটেছে পচাত্তরের পনেরোই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার মতো কলঙ্কজনক ঘটনা। এই পথ ধরেই যুদ্ধাপরাধীরা দেশে দোর্দণ্ডপ্রতাপে পুনর্বাসিত হয়েছেন, এক পর্যায়ে তাদের গাড়িতে উঠেছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে এই লজ্জা ও কলঙ্ক মোছার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এবারও আমরা পুরনো পথেই হাঁটছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করেই উচিত ছিল জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিরতরে নিষিদ্ধ করা। কিন্তু সেটি করা হয়নি। অর্থ্যাৎ সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি আবার ঘটছে। এই সুযোগে জামাত আবার সুযোগ পেয়েছে বড় দানব হয়ে সামনে আসার।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলাম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামক। জামায়াতে ইসলামী দলটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে উপস্থিত ছিল না। কিন্তু উপস্থিত ছিল আরেকটি ইসলামী দল – ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এ দলটির কোনো রাজনৈতিক ঐতিহ্য নেই কিংবা এর নেতারা এলাকায় পরিচিতও নন। কিন্তু নির্বাচনী ফলাফল গণনায় দেখা গেছে, খুলনা সিটিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মো. মুজাম্মিল হক হাতপাখা প্রতীকে ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়েছেন। আর গাজীপুর সিটিতে ইসলামী আন্দোলনের মো. নাসির উদ্দিন হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট। অর্থ্যাৎ শুধু ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করেই দেশের জনগণের একটি অংশের ভোট টানা যাচ্ছে। আর এই ভোটগুলো কিন্তু ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ভোট নয়। এই ভোটগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ভোট। মুক্তিযুদ্ধের আগে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখনও কিন্তু ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় ৩১ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল মুসলিম লীগ। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী একটি শক্তি সবসময়ই সক্রিয়।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী অনেক পুরনো একটি দল। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি চর্চাকে তারা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই প্রাচীণ ও সংঘবদ্ধ দলটি যদি ধর্ম পুঁজি করে আবার মাঠে নামে তবে এক শ্রেণির ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠীর ভোট তারা পাবেই। সে লক্ষ্যেই নিজেদের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপির বিরুদ্ধে গিয়ে আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে জামাত। আর সিলেটে জামাতের করা ক্যাম্পেইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একটি গোষ্ঠীর মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা এখনও অটুট।
এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামী দলটির আবার উত্থান ঘটছে। তারা শক্তি সঞ্চয় করছে। দল গুছিয়ে জোরেসোরে মাঠে নামতে যাচ্ছে তারা। এখন যদি আবার জামাতকে অবজ্ঞা করা হয়, তাদের উত্থানকে গুরুত্ব না দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে যে সেক্যুলার রাজনীতির একটি স্বপ্ন বিদ্যমান রয়েছে তা হারিয়ে যাবে।
সেক্যুলার রাজনীতির অঙ্গনে বাংলাদেশের একমাত্র জনপ্রিয় সেক্যুলার শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এছাড়া দেশের অন্য সব সেক্যুলার শক্তি যেমন সিপিবি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি প্রভৃতি বাম দলগুলোর জনগণের মধ্যে তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনগুলোতে তাদের প্রাপ্ত ভোটের দিকে তাকালেই তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এই বাম দলগুলো সেক্যুলার রাজনীতির বিকাশে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করছে না।
এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি যে, রাজনীতির এত বাঁক পরিবর্তন কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার মতো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার পরও বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক শক্তিগুলো বিকশিত হয়নি। বরং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিনকে দিন তারা জামাত-শিবিরের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের দিকে তাকানো যাক। এই কোটা আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই হলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা বাতিল। এটা এক অর্থে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অসম্মান করা। এভাবেই জামাত তাদের আজীবনের এজেন্ডা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সমর্থন দিচ্ছে জামাত-শিবিরকেই। কিন্তু এত কিছুর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিটি মনে করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শেষ হয়ে গেছে তাই জামাতকে নিয়ে আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিটি বারবার আদর্শিক লড়াইয়ে জামাতের কাছে পিছিয়ে পড়ছে।
এ কথা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী আবার ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, নিজেদের সংগঠনকে গুছিয়ে আনছে। এ সময়টাতে অতীতের মতো ভুল করলে আর শোধরানোর সুযোগ পাওয়া যাবে না। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে জামাতের শক্তিকে যেন অবহেলা না করা হয়। নতুবা বাংলাদেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল গোষ্ঠী জামাত ইস্যুটিকে একটি পরিত্যক্ত ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে যা একটি ভয়াবহ প্রবণতা। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবং বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জামাতের সমর্থক গোষ্ঠী কমেনি বরং বেড়েছে। তাই ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে যদি ইসলামী শক্তির উত্থান হয় তবে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মতো একটি শেকড়বিহীন দল যদি সিটি নির্বাচনগুলোতে এতগুলো ভোট পেতে পারে তাহলে জামাত যদি এদের সঙ্গে যুক্ত হয় তবে ইসলামী রাজনীতির ধারা আরও শক্তিশালী হবে। এতে বাংলাদেশে সেক্যুলার রাজনীতির যে প্ল্যাটফর্মটি এখনও অবশিষ্ট আছে সেটিও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।
কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে সেক্যুলার রাজনীতি চর্চাকারী দলগুলো ছোট ছোট ইস্যুতেও প্রাণভরে সমালোচনা করে যাচ্ছে কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর মতো মৌলবাদী দলগুলো যতদিন সক্রিয় থাকবে তাদের নিজেদের বিকাশ ততদিন ঠিকঠাকভাবে হবে না। কিন্তু এই সত্যিটি এড়িয়ে গিয়ে তারা ক্রমাগত সমালোচনা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগেরই। তাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গির যদি পরিবর্তন না হয় তবে অদূর ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের সেক্যুলার রাজনীতি হুমকির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচনে যতবার স্বাধীনতা বিরোধী ও ধর্মান্ধ-মৌলবাদীরা এক হয়েছে ততবারই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আবারও এমন একটি ঘটনা ঘটবে কীনা সেদিকে এখনই নজর দেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।