নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৯ এএম, ১৬ জুলাই, ২০১৮
আজ ১৬ জুলাই। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস। কথিত এক দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় ২০০৭ সালের এই দিনে তৎকালীন অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেই অবরুদ্ধ করে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধয়াক সরকার। শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার ছিল জনগণের কণ্ঠস্বর রোধ করে দেওয়ার, জনগণের অধিকার হরণের এক প্রক্রিয়া।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতির এই ন্যাক্কারজনক গ্রেপ্তারের ঘটনা ছিল জনগণের অধিকার হরণের প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ। এর শুরুটা হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, যখন প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করে। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরপরই দেশে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী হত্যা, লুণ্ঠন, লুটতরাজ, নিপীড়নের নারকীয় উৎসব শুরু করে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস ওঠে জনগণের। এক স্বপ্নহীন, নৈরাশ্যের যুগের সূচনা হয় দেশে। বিএনপি সরকার দেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র, একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলে। সে সময়ই বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গির উত্থান হয়। নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এম এস কিবরিয়ার মতো আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের জঙ্গি স্টাইলে হামলা করে হত্যা করে তাঁরা। কিন্তু যতদিন জনগণের কণ্ঠস্বর, গণতন্ত্রের প্রতীক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে থাকবেন ততদিন দেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন সফল হবে না বুঝতে পেরে বিএনপি-জামাত গণতন্ত্রের সুরক্ষা কবচ শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা তৈরি করে। এ উদ্দেশ্যে তারা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে। এ হামলায় ২৪ জন নিহত হন যাদের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানে স্ত্রী আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভী রহমানও ছিলেন। তবে সৌভাগ্যজনক ভাবে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
এরপর ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। দেশে এক অনিশ্চয়তার পরিস্থিতির সূচনা হলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। একই সঙ্গে বিএনপি মনোনীত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। সে সময়কার সেনাবাহিনীর প্রধান মঈন ইউ আহমেদও ছিলেন বিএনপির মনোনীত সেনাপ্রধানই। বিএনপির নিজেদের লোকদের ক্ষমতায় বসানোর উদ্দেশ্য ছিল আবার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করা ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতিতে কোণঠাসা করে ফেলা।
এই অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর একমাত্র শেখ হাসিনাই বারবার দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। একমাত্র শেখ হাসিনাই গণতন্ত্রের দাবিতে, জনগণের ভোটের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। ফলে তাঁকে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের জন্য ঝুঁকি মনে করতে থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ কারণেই ক্ষমতায় আসার মাত্র ৬ মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। সেই অন্ধকার ভোরে র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শেখ হাসিনার ধানমন্ডির বাসভবন সুধা সদনে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুটের তলায় পিষ্ট হয় গণতন্ত্র।
গ্রেপ্তার করে শেখ হাসিনাকে নিম্ন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে বন্দি রাখা হয়। ওই কারাগারেই মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস বন্দী থাকেন শেখ হাসিনা। বিশেষ কারাগারের পাশেই সংসদ ভবন চত্বরে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে তাঁর বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
কিন্তু সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। উত্তাল আন্দোলন ও শেখ হাসিনার প্রতি দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তৎকালীন অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকে ১১ জুনকে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
কারামুক্তির পর প্রথমেই তিনি ভীষণ -২০২১ প্রকাশ করেছেন যা জনগণ সাদরে গ্রহণ করে। ফলে ২০০৮ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনতা নিরঙ্কুশ রায় দেয় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের পক্ষে। নির্বাচনে এই বিজয় লাভই প্রমাণ করে শেখ হাসিনা জনতার মধ্যে কতটা জনপ্রিয় এবং তাঁকেই মানুষ নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জাদুকর হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পনেরোই আগস্টে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় সমুন্নত বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেননি। জাতির পিতার এই অসম্পূর্ণ স্বপ্নই এখন পূরণ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনিই গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি ও হৃদপিণ্ড। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর থেকে কোনো কারণে যদি শেখ হাসিনার কর্মক্ষম ও স্নেহময় হাত উঠে যায় তবে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়বে, বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানে পরিণত করার যে স্বপ্ন এখনো বিএনপি-জামাত দেখে চলেছে তাও বাস্তবে পরিণত হবে।
এ কথা অনস্বীকার্য, শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে। উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রাকে জারি রাখতে হলে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন। উন্নয়নের যে উদ্দীপনা, যে আশা-আকাঙ্ক্ষা জনগণের মধ্যে শেখ হাসিনা সৃষ্টি করতে পেরেছেন তা টিকিয়ে রাখতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।