নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ জুলাই, ২০১৮
সম্প্রতি কোটা আন্দোলন ইস্যুতে উত্তাল সময় পার করছে দেশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতরা কয়েকদিন পরপরই নেমে আসছে রাজপথে। কোটা আন্দোলনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আখ্যা দিয়ে এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন দেশের কয়েকজন ডাকসাইটে বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত সুশীল সমাজ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোটা আন্দোলন কি আসলেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন? নাকি এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে অন্য কোনো অপশক্তি।
কোটা সংস্কার বা বাতিলের দাবির শুরুটা কীভাবে হলো? কে উত্থাপন করলো প্রথম মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে আমাদের একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ২০০১ সালে যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় তখন নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে তাঁরা সর্বপ্রথম সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করার দাবি এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার দাবি উত্থাপন করে। নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট সরকার জয়ী হওয়ার পর প্রথম জাতীয় সংসদ অধিবেশন বসে ২০০২ সালের ৮ জানুয়ারি। সেখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব ও আলোচনার সময় জামাতের সংসদীয় দলের নেতা এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী প্রথম বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে দেওয়া দরকার। কারণ এই কোটার অপব্যবহার হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে। নিজামী আরও বলেন, আলাদা মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার কোনো প্রয়োজন নেই, পুরো কোটা ব্যবস্থারই সংস্কার করা দরকার।
এরপর জামাতের আরেক নেতা, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০০৩ সালে ৩৩ তম বাজেট অধিবেশনে বাজেটের ওপর আলোচনার সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য দাবি উত্থাপন করেন এবং কোটা সংস্কারের দাবি করেন। একই অধিবেশনে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আবদুস সোবহানও মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি তোলেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে কোটা সংস্কারের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদে ভাষণে বলেছিলেন, কোটা সংস্কার হওয়া উচিত। তবে বিভিন্ন কারণে এ বিষয়ে তখন আর অগ্রসর হতে পারেনি বিএনপি-জামাত জোট সরকার।
সে সময়টাতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল ইস্যুতে বেশি আগাতে না পারলেও নিজেদের এজেন্ডা থেকে বিষয়টিকে কখনো বাদ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের উদ্দেশ্যে ভেতরে ভেতরে কাজ করে গেছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ পুঁজি করে শিবিরের ক্যাডারদের নেতৃত্বে তাঁদের আন্দোলন করতে মাঠে নামিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এই শক্তিটি। এই আন্দোলনের নাম তাঁরা দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন।
যদিও শুরুর দিকে আন্দোলনকারীদের দেখা গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে রাস্তায় নামতে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যামোফ্লাজের আড়ালে এই আন্দোলনের মূল টার্গেটই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল।
যত দিন গেছে আন্দোলনের পেছনের এই মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের গুলিতে ছাত্র মারা গেছে, ছাত্রলীগ নেত্রী এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে – এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকারীরা ক্রমাগত দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে গেছেন। ঢাবি উপাচার্যের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নাশকতাও করেছে নিজেদের মেধাবী দাবি করা এই কোটা আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে আমি রাজাকার, রাজাকারের বাচ্চা আমি আমার পিতা শেখ মুজিবের মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান মুখে এঁকে, প্ল্যাকার্ডে লিখেও পথে নামতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদেরকে। আর এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল ঘৃণিত রাজাকার শব্দটিকে একটি সাধারণ শব্দের পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
এরপর বিভিন্ন সময়ে কোটা আন্দোলনের মূল আহ্বায়কদের কথাবার্তা থেকেও স্পষ্ট হয়েছে, কোটা আন্দোলনের মূল লক্ষ্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা। বারবার তাঁদের কথাবার্তায় উঠে এসেছে তাঁদের আপত্তির জায়গাটি ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা। কোটা আন্দোলন যে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন নয়, এর পেছনে যে কলকাঠি নাড়ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তা সময়ের সঙ্গে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।
জামাত মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করবে এ নিয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই। জামাত একাত্তরের পরাজিত শক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারই বিরোধী তাঁরা। এই বিরোধিতা একাত্তরে নিকৃষ্টতম রূপ ধারণ করেছিল। নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি চালিয়েছিল তখন জামায়াতে ইসলামী। স্বাধীনতার পর ৪৬ বছর কেটে গেছে, রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওঠার মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক অবস্থানে কোনো হেরফের হয়নি। তাই জামাত যখন থেকে প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম বারের মতো ক্ষমতায় এসেই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আর তখন থেকেই এই মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করে আসছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী।
কিন্তু দুঃখের বিষয়টি হচ্ছে, দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ, বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবীগণ এবং নিজেদের সেক্যুলার রাজনীতির প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করা দেশের বাম দলগুলোও এই আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে। তাঁরা নাশকতার অভিযোগে আটক কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, এ বি এম সুহেলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করছেন, তাঁদের মানববন্ধন থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আপত্তিকর ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে।
এই শ্রেণিটি কলাম লিখে, সংবাদ সম্মেলন করে ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করে যাচ্ছে, যার সুফল আসলে ভোগ করছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিটি। এই বুদ্ধিজীবীরা বুঝতেই চাইছেন না কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে তাঁরা জামাত-শিবিরের চক্রান্তে পা দিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্দেশ্য-বিধেয় বিশ্লেষণ না করে কেবল আবেগী হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার মাধ্যমে যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পথ সুগম হচ্ছে সেটিও মানতে চাইছেন না তাঁরা।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের জায়গা। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি তোলার অর্থই হলো মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের অসম্মান করা। আর কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবির। আর চিন্তাভাবনা না করেই তাঁদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে দেশের সুশীল সমাজ।
Read in English- https://bit.ly/2muwLqG
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
তবে সৌদি আরবের প্রবাসী বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন যে, যেহেতু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরব সফরে গেছেন এবং যেহেতু তিনি মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠ পূর্বপরিচিত ও রাজনৈতিক সহকর্মী, সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সপরিবারে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফালুর বৈঠক লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তারেক জিয়ার সঙ্গে ফালুর বিরোধের খবর বিএনপিতে অজানা নয়। বিশেষ করে তারেক জিয়ার অনাগ্রহ এবং আপত্তির কারণেই মোসাদ্দেক আলী ফালু রাজনীতি ছেড়েছেন বলেই অনেকে মনে করেন।
মোসাদ্দেক আলী ফালু ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার দেহরক্ষী। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সেই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর তাকে একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। একান্ত সচিব হলেও ক্ষমতাকেন্দ্রে মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অনেকেরই ধারণা যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অবৈধ সম্পদ তার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশে এনটিভির মালিক। আইএফআইসি ব্যাংকে তার শেয়ার রয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু শিল্প কলকারখানায় তার বিনিয়োগ রয়েছে। এই সমস্ত বিনিয়োগের অর্থ বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বলে একাধিক সূত্র দাবি করে। যদিও এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক আলী ফালু সবসময় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এক এগারোর সময় দুর্নীতির অভিযোগে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং এই মামলাগুলো যখন বিচারিক আদালতে ওঠে তখন ফালু পালিয়ে সৌদি আরবে যান। এখনও তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এর মধ্যে বিএনপিতেও তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। তারেক জিয়া যখন বিএনপিতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হন, তখন মোসাদ্দেক আলী ফালুকে অপাংক্তেয় করা হয়। তাকে একটি অসম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছিল সর্বশেষ কাউন্সিলে। এই পদ প্রাপ্তির পর মোসাদ্দেক আলী ফালু অভিমান করেন এবং তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ করেন। যদিও ফালুর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখনও খালেদা জিয়ার সমর্থকরা এবং তারেক জিয়া বিরোধীরা নিয়মিত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিভিন্ন নেতা কর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।
ফালুর একটি আলাদা প্রভাব বলয় রয়েছে বিএনপিতে। সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যখন বিএনপির অনেকেই সোচ্চার, বিশেষ করে তার অদূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তখন অনেকেই নতুন করে ফালুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ মোসাদ্দেক আলী ফালুই করে থাকেন বলে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে।
আর এই কারণেই বিএনপিতে ফালু না থেকেও আছেন। ফালু এখনও বিএনপিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণেই তারেক জিয়ার চক্ষুশূল মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন তারেক জিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর একারণেই ফালুর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তিনি ঝালাই করে নিলেন।
তবে অনেকেই মনে করেন যে, এটি একটি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ। বিদেশে গেলে নিকটজনের সাথে সাক্ষাৎ করলে একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যায়। সেজন্যই ফালুর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মীয় স্বজনের বিষয়টি ব্যাখ্যা দেন এবং এ ব্যাপারে তার অবস্থান তিনি জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যায় দেখা যায় যে, আত্মীয় স্বজন বলতে তিনি মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কথাই বুঝিয়েছেন এবং তারা যেন একই পরিবার থেকে সবগুলো জায়গায় প্রার্থী না হন সেরকম একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এটি একটি সতর্কবার্তার মত, কোন নিষেধাজ্ঞা নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন ইস্যুটিকে জমিয়ে তুলেছিলেন এবং এ নিয়ে তিনি কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এর পিছনে নোয়াখালীর রাজনীতি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরকে এই আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না- এ বিষয়ে অত্যন্ত সরব এবং সক্রিয় দেখা গেছে। এটির নেপথ্যের কারণ জাতীয় রাজনীতির চেয়ে নোয়াখালীর রাজনীতি বেশি বলেই বিভিন্ন মহলের ধারণা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই কোণঠাসা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী একরামুল করিম চৌধুরী। একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তার ছেলে যদি উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় তাহলে একরামুল করিম চৌধুরীর পরিবারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে নোয়াখালীতে। এরকম একটি শঙ্কা থেকে ওবায়দুল কাদের চাননি যে, একরামুল করিম চৌধুরীর পুত্র উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হোক। তার প্রার্থীতার ঠেকানোর জন্যই কি আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উদ্যোগী হয়েছিলেন, অনেকেই এখন এই প্রশ্নটাই করছেন।
তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাই ম্যানদেরকে প্রার্থী করছেন। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী করে এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এর বিরোধীতার জন্যই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
তবে নোয়াখালীর রাজনীতির জটিল সমীকরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একরামুল করিম চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং তার আরেকজন নিকটতম আত্মীয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তার ভাইয়ের মনোনয়ন ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। এর আগেও ২০০১ সালে এ বিরোধ প্রকাশ্য ছিল এবং সেই সময় একরামুল করিমের বিরোধীতার কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আমাদের কাছে পরাজিত হন। এখনও ওবায়দুল কাদেরের জন্য একরামুল করিম একটা বড় ফ্যাক্টর।
তাহলে কি একরামুল করিমের নোয়াখালীতে আধিপত্য ঠেকানোর জন্যই আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে দাঁড়ানো যাবে না এমন একটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছিল? অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন ব্যক্তিকে ঠেকানোর জন্য নয়, এটি আওয়ামী লীগের একটি নৈতিক এবং নীতিগত অবস্থান।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগ একরামুল করিম চৌধুরী
মন্তব্য করুন
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক সৌদি আরবে গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করার জন্য গেছেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আগামী ৮ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে ওমরাহ’র ফাঁকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে এক সময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এবং বেগম জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি আরবে অবস্থানরত মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সেই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্ত্রীও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নির্দেশনাটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে গোনা দু একজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা শোনেননি।