নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০২ পিএম, ২৪ জুলাই, ২০১৮
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সাউথ ব্লক অর্থ্যাৎ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে এরশাদ কথা দিয়েছেন যে ২০১৪ এর মতো পাগলামি আর করবেন না তিনি। অর্থ্যাৎ ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে সরে আসার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে তার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না। সাউথ ব্লকের সঙ্গে বৈঠকেই এরশাদ প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন, ২০১৪ তে বিএনপির সঙ্গে তাঁর একটি সমঝোতা হয়েছিল আর বিএনপি তাকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য একটি টোপ দিয়েছিল। টোপটি ছিল, এরশাদের জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তবে নির্বাচন হয়তো বানচাল হয়ে যাবে। আর নির্বাচন না হলে সরকারের পতন হবে। তখন যদি বিএনপি কখনো ক্ষমতায় আসে তাহলে এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করা হবে। তাই সমঝোতার ভিত্তিতে এরশাদ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। একই কারণে তাঁর দলের অধিকাংশ সদস্যও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে অনুরোধ করেছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। কিন্তু এরশাদ এতেও কর্ণপাত করেননি। এবার ভারতে গিয়ে এরশাদ ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং কথা দিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভুল ২০১৮ তে আর তিনি করবেন না।
এরশাদ মনে করেন, জাতীয় পার্টির অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। তিনি জানান, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে একভাবে এবং অংশ না নিলে আরেকভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে চিন্তা করবে জাতীয় পার্টি। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে জাতীয় পার্টি মহাজোটের আকারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আর যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারত নিশ্চিত করেছে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এরশাদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে তাঁরা। তখন এরশাদ বলেছেন, সর্বনিম্ন ৭০ আসন পেলে তিনি মহাজোটের সঙ্গে থাকবেন। নাহলে আলাদা হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তবে এ ব্যাপারে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী তা জানা যায়নি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একটি দল হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই মহাজোট থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেন এরশাদ। তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচনে যায়।
এক পর্যায়ে নিজেকে অসুস্থ দাবি করে এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালেও ভর্তি হন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। এমনকি এরশাদ তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন কিন্তু সময় মতো আবেদন না করায় লালমনিরহাট ও রংপুরের দুটি আসনে তাঁর প্রার্থিতা রয়ে যায়। সেবার রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি।
শপথ গ্রহণ নিয়েও যথেষ্ট নাটক করেন এরশাদ। প্রথমে শপথ নেবেন না বলে জানালেও ভোটের ছয় দিন পর ১১ জানুয়ারি শপথ নেন তিনি।
বর্তমানে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন। বিশেষ দূত হিসেবে বেতন-ভাতাসহ সরকারি সুবিধাও পাচ্ছেন তিনি।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে বাংলাদেশ
থেকে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বুধবার (০১ মে)
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সাতটি ধাপে জাতীয়
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই নির্বাচনে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি ও
প্রচারণা দেখানোর জন্য বিদেশি কিছু রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে
একমাত্র আওয়ামী লীগকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ভারতে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। অন্যদিকে,
বাংলাদেশে পরপর চারটি জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে
জয়লাভ করে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে
যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন পুরো পৃথিবীকে অবাক করেছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ
গণতন্ত্র ভারত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যে আস্থাশীল এবং
আওয়ামী লীগকে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রকৃত বন্ধু
মনে করে, এই আমন্ত্রণ সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে
অনুরোধ করেছে।
এই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে দলের
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ভারত সফরে
মনোনীত করেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, এই সফরটি মূলত পাঁচ দিনের। ১
মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত। সফরে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধির সঙ্গে বিজেপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের
বৈঠক রয়েছে। দিল্লির বাইরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা সরেজমিনে দেখানোর জন্য বিজেপি
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিকে ছত্রিশগড়ে নিয়ে যাবে।
ভারতের নির্বাচন ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে যা ১ জুন পর্যন্ত চলবে।
৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষিত হবে।
ভারত নির্বাচন বিজেপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন