নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০৬ পিএম, ২৬ জুলাই, ২০১৮
ঐতিহাসিক ভাবেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর দল মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বিএনপি। একই সঙ্গে পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক। তবে সময়ের পরিবর্তনের এখন দু:সময় নওয়াজের। গতকাল অনুষ্ঠেয় পাকিস্তানের নির্বাচনে তাঁর দল মুসলিম লিগের ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনের পুরো ফলাফল না আসলেও তাদের বিপর্যয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর তাই সম্প্রতি দেশে ফিরে মেয়ে মরিয়ম সহ গেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা নওয়াজ শরিফ যে শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছেন না। আর নির্বাচনে দেশটির সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের বিজয়ী হচ্ছেন বলা যায়। ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) এর বিজয়ে আরেকটি বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেছে, তা হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পরিবর্তন। এই পরিবর্তিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও যে বিএনপির নেতৃত্বের অপরিচিত।
অ্যাভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়েই গত ১৩ জুলাই লন্ডন থেকে পাকিস্তানে ফেরেন নওয়াজ শরিফ। নওয়াজের দেশের ফেরার খবরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েই হয়তো দেশে ফিরছেন তিনি। তবে পাকিস্তানে লাহোরের বিমানবন্দরে নেমেই গ্রেপ্তার হন নওয়াজ শরিফ এবং তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। এরপর থেকেই বন্দী জীবন যাপন করছেন। ওই ঘটনার মাত্র ১২ দিন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হলো পাকিস্তানের একাদশ পার্লামেন্ট নির্বাচন। সেখানেও ভরাডুবি দলের। নওয়াজ শরিফের দেশে ফিরে আসার খবরে অনেকেই আশা করেছিল নির্বাচনে জয়ী হয়ে হয়তো বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকা রাজনৈতিক দলকেও সহায়তা করবেন তিনি। আর পাকিস্তানে যেমন নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে মুক্তি পাবেন তেমনি বাংলাদেশে মুক্তি পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দেশে ফিরবেন তাঁর ছেলে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। কিন্তু পরপর দুটি ঘটনার পর এমন কল্পনা করা অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
পাকিস্তানে নির্বাচনে এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে ইমরান খানের নেতৃত্ব। নতুন এই পাক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে অপরিচিত। কারণ ইমরান খানের যখন রাজনীতি প্রবেশ যখন, তখন থেকেই বিএনপি যে বাংলাদেশের মূলধারা থেকে দূর পরাহত। নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের যে নৈকট্য ছিল ইমরানের সঙ্গে ঠিক ততটাই দূরত্ব। একই সঙ্গে ইমরানের নেতৃত্ব আসার ফলে পাকিস্তান আর্মিতে পরিবর্তনের ফিসফাস বাস্তব হয়েই দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনে ইমরানের এই সাফল্যের নেপথ্যে আছে পাকিস্তান আর্মি। দেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার পালাবদলে পাকিস্তান আর্মির প্রভাবের কথা সবারই জানা। ইমরান খানকে ক্ষমতায় আনার পেছনেও বড় ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু ইমরানকে ক্ষমতায় এনে সেনাবাহিনীর কী লাভ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে পাকিস্তান আর্মিতে এসেছে তরুণ নেতৃত্ব। এই তরুণ নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কে আগ্রহী। তাইতো এনেছে ইমরানকে।
পাকিস্তান আর্মি ভারতের সঙ্গে বৈরিতার বদলে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। যুদ্ধ-বিগ্রহে সময় ও অর্থ অপচয় না করে ভারতের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায় পাকিস্তান আর্মির তরুণরা।
পাকিস্তান আর্মির আগের নেতৃত্বে সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল বিএনপির। নতুন এই তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপি পুরোপুরিই অপরিচিত। ভারত বিরোধী মনোভাব থেকে বাংলাদেশে বিএনপির পক্ষে পাক আর্মির সমর্থন আশা ছিল বিএনপির। কিন্তু পরিবর্তিত পাকিস্তান আর্মির কাছ থেকে সেই আশা গুড়ে বালি।
নির্বাচন পরবর্তী পাকিস্তানে আগামী কয়েকমাস রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তাল থাকবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমন উত্তাল অবস্থায় দেশ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা (আইএসআই) থেকে শুরু করে দেশটির সব ধরনের নিরাপত্তা বাহিনী। তাই আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে পাকিস্তানের কোনো আগ্রহ এবং দেওয়ার মতো সময় থাকবে না বলেই বিশ্বাস আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
পাকিস্তান নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব যে স্বপ্নের জাল বুনেছিল তা এরই মধ্যে ছিঁড়ে গেছে। নির্বাচন এবং এর আগে পরের ঘটনাপ্রবাহে এটা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে অনেকদিনই পাকিস্তানকে পাশে পাচ্ছে না বিএনপি। পাকিস্তানের নির্বাচন সামগ্রিকভাবেই হতাশ করেছে বিএনপিকে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন