নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৬ জুলাই, ২০১৮
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সবকিছুতেই পিছিয়ে পাকিস্তান। গত কয়েক দশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের সূচকেই পাকিস্তানের চেয়ে বহু এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশে যে মডেল প্রতিষ্ঠা করতে পশ্চিমারা বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, সেই মডেল বাস্তবায়ন হলো পাকিস্তানে। আরও একবার পিছিয়ে পড়ল পাকিস্তান।
পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। ঐতিহ্যগত ভাবে দেশটির বৃহত্তম দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) এরই মধ্যে পরাজয়ের কথা জেনে গেছে। সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) এরই মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে। আর এর মধ্যে দিয়েই পাকিস্তানে উত্থান ঘটল তৃতীয় শক্তির। যেই তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটাতে এশিয়াসহ সারাবিশ্বে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো, তারই সফল বাস্তবায়ন ঘটল পাকিস্তানে।
জয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখেন ইমরান খান। রাজনৈতিক মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না হলেও বিশ্ব গণমাধ্যম বলে দাবি করা পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ঘণ্টাব্যাপী সেই ভাষণ প্রচার করল। কারণ এটা তাদেরই ‘ব্রেন-চাইল্ড’এর প্রসব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের দুই বৃহত্তম দল পিপিপি এবং পিএমএল পালাবদল করে ক্ষমতায় আসতো। দুটি দলই পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট ছিল। কারণ তাদের মাধ্যমেই গড়ে উঠছিল পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই। দুটি দলই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে ছিল। এই কারণেই প্রয়োজন ছিল তৃতীয় শক্তির, যাঁরা সেনাবাহিনীর কাছে জিম্মাদার হয়ে দেশকে পশ্চিমাদের কাছে বিকিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। আর এই ম্যান্ডেটেই উত্থান ইমরান খানের।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৃতীয় শক্তির উত্থান নিয়ে পশ্চিমারা বহুদিন ধরেই গবেষণা করে আসছে। বহুদেশেই এর বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাও চালিয়ে আসছে তারা। বাংলাদেশেও এই প্রচেষ্টা বহুদিন ধরেই চলেছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও পশ্চিমাদের মূল লক্ষ্য আসলে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটানো।
বিশ্লেষকরা বলেন, গণতন্ত্রের কথা যদি সত্যিকার ভাবেই বলা হতো তাহলে পশ্চিমাদের নেতৃত্বে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে নিজের দেশের গণতন্ত্র নিয়ে মাথা ঘামাতো। তাদের দেশেই নির্বাচনে হ্যাকিংসহ নানা বিতর্ক। নিজেদের বিষয়ের সমাধান না করে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের ধোঁয়া তোলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সত্যিই কি তারা গণতন্ত্রের ধারক বাহক? প্রশ্ন অনেকের।
ইতিহাস থেকে যদি দেখা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকা অবস্থায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের প্রধান কাজ ছিল বিশ্বের জনপ্রিয় সব নেতাদের মেরে ফেলা। চিলির সালভাদর আলেন্দেকে মেরে ফেলা হয়। একই ভাবে জীবন দিতে হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কারণ ছিল একটাই জনপ্রিয়দের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের সরকার ক্ষমতায় বসানো। যেই চেষ্টা এখনো অব্যাহত। যেখানে প্রধান দুই দলই অপছন্দের সেখানেই প্রয়োজন হয় নিজেদের জন্য তৃতীয় শক্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
তৃতীয় শক্তি নিয়ে পশ্চিমাদের তৎপরতা প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের মত, কোনো দেশে এর বাস্তবায়নে প্রথমেই কব্জা করা হয় সামরিক বাহিনীকে। সমরাস্ত্র, প্রশিক্ষণসহ নানা কারণেই কোনো দেশের সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর উপর নির্ভর করতে হয়। এছাড়া, জাতিসংঘের মিশনেও মার্কিন অনুমোদন ছাড়া কি আর কোনো দেশের আর্মি যেতে পারে। এসব কারণেই সামরিক বাহিনীকে পক্ষে টানা সহজ হয় পশ্চিমাদের। এরপর কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিকে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়। পুরস্কার থেকে শুরু করে নানা উদ্যোগের মাধ্যমেই এ কাজটি করা হয়। এরপর তাঁর নেতৃত্বে কোনো দল তৈরি হয়, যা সময়ের পরিবর্তনে দখল করে রাষ্ট্রক্ষমতা। যেমন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেন ইমরান খান।
বাংলাদেশে পশ্চিমাদের তৃতীয় শক্তির উত্থানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের মত, অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে এই মডেল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হয়েছে। ২০০৬ সালে পশ্চিমাদের তৃতীয় শক্তি প্রচেষ্টার মডেল দৃশ্যমান হলেও এর শুরুটা হয়েছিল বেশ আগেই। আর এজন্যই ড. ইউনূসকে তৈরি করা হয়েছিল। এমন কোনো পুরস্কার নেই যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন ড. ইউনূস। সবচেয়ে বড় গ্রহণযোগ্যতা আসে অর্থনীতির মানুষ হয়েও শান্তিতে নোবেল অর্জনের মধ্যে দিয়ে। অনেকের হয়তো মনে আছে নোবেল পুরস্কারের অর্জনের পরই হঠাৎ করেই রাজনৈতিক দল গঠনের কথা ঘোষণা করেন ড. ইউনূস। ড. ইউনূস যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকারই ইচ্ছাপোষণ করেছিলেন তা সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের বইয়ে পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, যখন তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল তখন অল্প কোনো সময় নয়, দীর্ঘ সময় থাকতে পারলেই শুধু ক্ষমতায় আসবেন বলে জানিয়েছিলেন এই নোবেল জয়ী। ড. ইউনূসের কাছে ব্যর্থ হবার পর আরও অনেকের মাধ্যমেই বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তি আনার প্রচেষ্টা চলে। ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে প্রচেষ্টা কম হয়নি পশ্চিমাদের। এই দলে আছেন, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীসহ অনেকে। তবে কোনোভাবেই তৃতীয় শক্তি আনার প্রচেষ্টায় সফল হতে পারেনি পশ্চিমারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অনেক দল মত থাকলেও বাংলাদেশে এখনো রাজনৈতিক দল বলতে আসলে দুটিই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটি নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে, ক্ষোভ আছে, কিন্তু দিন শেষে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ভারসাম্য টিকে আছে। তৃতীয় শক্তিকে আনা হলে এই ভারসাম্য স্বভাবতই থাকবে না। আর বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তি উত্থানের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো জনগণ।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের মানুষ কখনোই কোনো তাঁবেদার তৃতীয় শক্তির পক্ষে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধ করে, অনেক ত্যাগের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। এই দেশের মানুষের রক্তের মধ্যেই আছে গণতন্ত্র। অনেক কিছুর অভাব দেশে থাকতে পারে কিন্তু স্বাধীন চেতনা ও সত্ত্বার কোনো ঘাটতি কখনোই ছিল না বাংলাদেশে। আর এটাই হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যেকার মূল পার্থক্য।
বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন চেতনা যেখানে সদা জাগ্রত সেখানে পাকিস্তান তা হারিয়েছে সেই কবেই। তা নাহলে কত চড়াই উৎরাই পেরিয়েও বাংলাদেশে চলতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেখানে দুই দশক আগে স্বাধীন হয়েও পাকিস্তানে এখনো ১১তম পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। পাকিস্তানে গণতন্ত্রের পথ অনেক আগেই সংকীর্ণ হয়ে গেছে দেশটিতে তৃতীয় শক্তির অন্যতম দাবিদার সেনাবাহিনীর কারণে। আর তাই বাংলাদেশে যে তৃতীয় শক্তি মডেল বারবার ব্যর্থ, তাই প্রতিষ্ঠিত হলো পাকিস্তানে। বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে পড়া ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তান আরেকবার তার ব্যর্থতার পরিচয় দিল।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।