নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ জুলাই, ২০১৮
বিএনপিকে একঘরে করার কৌশলে এগুচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সিপিবির সঙ্গে বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বৈঠক করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপে আগ্রহী আওয়ামী লীগ।‘ বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে আলাপে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শীগগিরই আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসবে।‘
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, চলতি সপ্তাহেই আ.স.ম. আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি এবং কর্ণেল(অবঃ) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে ক্ষমতাসীন দলটি। নির্বাচনের আগে বাম প্রগতিশীল দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসার জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করছে। এতে শুধু আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক একা নন, তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিমও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সিনিয়র নেতাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী নেতারা কাজ শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে বাম এবং প্রগতিশীল দল গুলোর সঙ্গে সংলাপ করলেও, আওয়ামী লীগ গোপনে দক্ষিণ পন্থী, ইসলাম পছন্দ দল গুলোর সাথেও সম্পর্ক বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ডঃ হাছান মাহমুদকে দেয়া হয়েছে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব। গাজীপুর এবং খুলনার হেফাজত নিষ্ক্রিয় ছিল। বিএনপি অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগের মদদের কারণেই সিলেটে জামাত আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। একই কারণে রাজশাহীতে জামাত বিএনপি থেকে দূরে। সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এর ফলে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচন সকল দলকে নিয়ে করতে চাই। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমরা প্রয়োজনে কথা বলবো। একটি সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বিএনপির সঙ্গেও নিয়মিত কথাবার্তা বলছেন। বিএনপির ১০ নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্ত আওয়ামী লীগ এসব আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীকে সম্পৃক্ত না করার নীতি গ্রহণ করেছে। একাধিক সূত্র বলছে, ক্যান্টনমেন্টে বিএনপির সাবেক নেতার বাসায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দু’দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির পুরোটা না এলেও, একটি বড় অংশ যে নির্বাচনে অংশ নেবে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিশ্চিন্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও পর্দার আড়ালে আওয়ামী লীগ সংলাপ প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই শুরু করেছে। সংলাপের মুল লক্ষ্যই হলো সব দলকে নির্বাচনে আনা।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বহিষ্কার বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
লোকসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিজেপি
মন্তব্য করুন