নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৭ জুলাই, ২০১৮
‘মা কথাটি ছোট্ট অতি,
কিন্তু জেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নামটি মধুর
তিন ভুবনে নাই’
শিশুকালে এই কবিতা পড়েনি এমন মানুষ বাংলাদেশে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘মা’ কবিতার এই ছোট পংতিতেই মা ও সন্তানের সম্পর্ক কতোটা নিবিড় তা বোঝা যায়। পৃথবীর সবচেয়ে আবেগঘন, পবিত্র সম্পর্ক হয় মা ও সন্তানের মধ্যে। জন্মদাত্রী মা গর্ভে সন্তান ধারণ করে দীর্ঘ ১০ মাস। এই সময়ে মায়ের শরীরেই অংশ হয়ে থাকি আমরা। মায়ের কল্যাণেই পৃথিবীর আলো দেখি। আর মাতৃদুগ্ধ পান করেই বেঁচে থাকতে প্রায় বছর কাল। এই মায়ের দুধের ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। সন্তানের জন্য মায়ের যেমন নারী ছেঁড়া বেদনা। তেমনি মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার নজির বিশ্বজোড়া।
বরপীর আবদুল কাদের জিলানীর মাতৃভক্তির কথা অনেকেরই জানা। গভীর নিশুতি রাতে মা পানি খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পানির পাত্রে পানি ছিলনা। পাত্র নিয়ে গভীর রাতে বহুদূর থেকে পানি বয়ে আনলেন আবদুল কাদের জিলানী। গ্লাসে পানি নিয়ে দেখলেন মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলেন গ্লাস হাতে, মা যদি ঘুম হঠাৎ জেগে ওঠে, পানি খেতে চায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে সন্তানের মাতৃভক্তি দেখে বিস্মিত মা। একই রকম মাতৃভক্ত ছিলেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। মায়ের অসুখের কথা শুনে দিন-রাত ভুলে ছুটে গিয়েছিলেন দেখতে। পথে উন্মত্ত নদী। কোনো খেয়া ছিল না। সাঁতরেই পার হয়েছিলেন সেই নদী। এমন কত মাতৃভক্তির নজিরই না আছে বিশ্বজুড়ে। তার কয়টাই বা আমাদের জানা। সব কাহিনীরই মর্মকথা একটিই, মায়ের দুধের ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। সন্তানের জন্য মা যেমন সর্বস্ব উজার করে দিতে পারেন। তেমনি সন্তানও মায়ের জন্য সব কিছু করতে পারে। প্রকৃত সন্তান মায়ের জন্য জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনা। একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে শুধু মায়ের জন্যই। এটিই পৃথিবীর হাজার বছর ধরে চলে আসা রীতি। এ যেন চিরন্তন এক সত্য। কিন্তু মা সন্তানের এই চিরন্তন সত্য ও মধুর সম্পর্ককে মিথ্যা প্রমাণ করতে বসেছেন একজন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে। আজ শুক্রবার (২৭ জুলাই) তাঁর কারাজীবনের ১৬৯ তম দিন। এতদিন ধরে মা কারাগারে অথচ বড় ছেলে তারেক জিয়া একটিবারের জন্যও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি দেশে আসতেন তাহলে কী হতো? অনেকের মতে, সর্বোচ্চ তাঁর কারাদণ্ড হতো। কিন্তু অর্থবিত্তের জোরে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যেতেন। সবচেয়ে বড় কথা সত্তরোর্ধ মা খালেদা জিয়া তো অন্তত সন্তানকে কাছে পেতেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরেও দেশে ফিরে একটিবারের জন্য তাঁকে দেখতে অসেনি তারেক।
মা-সন্তানের বিশ্বের মধুর ও পবিত্রতম সম্পর্ক মিথ্যা প্রমাণ করতে হেন কাজ নেই যা তারেক করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রথম মেয়াদে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলনামূলক কম ছিল। অবশ্য তখন থেকেই দুর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়া। এমনকি যে দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়া ৫ বছরের জন্য কারাভোগ করেছেন তার জন্যও দায়ী মূলত তারেক। অথচ মাকে নিসঙ্গ কারাগারে ফেলে সৌদি বাদশাহদের মতো ব্রিটেনে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন সেই তারেকই। ব্রিটেনে জুয়া খেলা এখন তারেক জিয়ার নেশা। মা যেখানে কারাগারের প্রকোষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন সেখানে তারেক ব্রিটেনের প্রাসাদতম বাড়িতে থাকেন।
বাংলা সাহিত্য-উপন্যাস ও চিরন্তন বিশ্বাসে মায়ের প্রতি যে ভালোবাসা, আবেগ তার কোনোটাই নেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার। বরং অভিযোগ আছে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নাকি বেগম জিয়াকে জেলে রাখছেন তারেক গং। কারণ এর মাধ্যমে নাকি বিএনপি এর হারিয়ে যাওয়া জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে। অবশ্য বেগম জিয়ায় জেলে থাকায় দলের একচ্ছত্র অধিপতি তো তারেক জিয়াই। সামনে নির্বাচনে যে বিপুল মনোনয়ন বাণিজ্য হতে তাঁর সবই তো এখন লন্ডনে বসে তারেকই হস্তগত করবেন। বিএনপি নামক লাভজনক এক ব্যবসা এখন শুধুই তারেক জিয়ার।
কিন্তু একজন সুস্থ মানুষের বিবেকের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়- এমন সন্তান কি আসলেই আমরা চাই। বাংলাদেশের অনেক সন্তান তাঁর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়। নূন্যতম বিবেকবান মানুষও এর সমালোচনা করেন। যে সন্তান মাকে ভালোবাসে না, মাকে দূরে সরিয়ে রাখে তাকে ধৃক্কার জানাই আমরা। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমের বদলে নিজের কৃতকর্মের জন্য মাকে কারাগারে পাঠিয়ে সবকিছু দখল করে বিলাসী জীবনযাপনকারী সন্তানকে আপনি কী বললেন? কু-সন্তানও হওয়ারও কি যোগ্যতা সেই সন্তানের আছে? অনেকের কু-সন্তানকে বলেন এমন সন্তান না হলেই ভালো হতো। তাঁরা তারেক জিয়াকে কী বলবেন?
একজন রাজনীতিবিদ হবেন আদর্শ। কারণ তাঁকে অনুসরণকারীরা তাঁর জীবনযাপনও অনুসরণ করেন। তাঁর মতোই হতে চান। কিন্তু তারেক জিয়া একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন? ইতিহাসের ঘৃণিত একজনকে যাঁরা অনুসরণ করছেন তারা কি একবার অন্তত আয়নায় নিজের মুখটি দেখেছেন? সত্যিই কি আপনারা তাঁর মতোই হতে চান?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।