নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ২৮ জুলাই, ২০১৮
আজ মধ্যরাতেই শেষ হবে আনুষ্ঠানিক সব প্রচারণা। মাঝখানে মাত্র একদিন আগামীকাল রোববার। চলবে নির্বাচনের সব আয়োজন। পরদিন সোমবার (৩০ জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে তিন সিটি নির্বাচন। সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল তিন সিটিতে একযোগে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিন সিটিতে তিন মেয়র পদের পাশাপাশি ৫৩০ কাউন্সিলর পদের জন্য লড়বেন প্রার্থীরা। বিপুল আয়োজনের কারণেই তিন সিটি নির্বাচনকে বলা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেল। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একযোগে অনুষ্ঠেয় তিন সিটি নির্বাচনকে বলছেন সেমিফাইনাল খেলা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর দুই সিটি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। পরশু অনুষ্ঠেয় তিন সিটিতেও জয়ের সুবাতাস পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই মনে করছেন আবারও ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগ। এখন প্রশ্ন হলো তিন সিটি নির্বাচনে যাই ঘটুক-কী হবে পরবর্তী রাজনীতির গতিপ্রকৃতি?
আর বারবার আন্দোলনের কথা বলে সময় বেঁধে দিয়েও বিএনপি কার্যকর কোনো আন্দোলনে যেতে না পারায় একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, আন্দোলনে যাওয়ার মতো অবস্থা এখন আর নেই। আর বিএনপির নেতাকর্মীরা এটিও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে দুর্নীতির দায়ে কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিগগিরই মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে যাবে যাবে এমন করতে করতে রাজনীতিতে এক মেরুকরণের উদ্ভব ঘটিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে তার জোটের পরিধি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক চলছে আওয়ামী লীগের। এই হলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র তিন মাস আগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন সিটি নির্বাচন। এখন নির্বাচনের পরাজিত হলে বিএনপির রাস্তা একটাই কারচুপির অভিযোগ এনে আন্দোলনে যাওয়া। আগামী সব নির্বাচন বর্জন করতে পারে বিএনপি। কিন্তু এই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিএনপির মধ্যেই এখন নির্বাচনে যাওয়ার চাপ বাড়ছে। কি করবে বিএনপি তা সময়ই বলে দিবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের মাত্র একদিন পরই শুরু হচ্ছে শোকের মাস আগস্ট। এই মাসে ঐতিহ্যগতভাবেই বাংলাদেশে তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে না। তাই তিন সিটির ফলাফল মনমতো না হলেও বিএনপি আন্দোলনে যাবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।
আর তিন সিটি নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে গেলে অর্থাৎ তিন সিটিতে জয় পেলে আওয়ামী লীগের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখা যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন এর ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন মনোভাব দেখা যেতে পারে- তারা জাতীয় নির্বাচনেও জয়ী হচ্ছে। আর এমন মনোভাবের কারণে অন্ত: কোন্দল বেড়ে যেতে পারে আওয়ামী লীগে।
তবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, সিটি নির্বাচন আসলে জাতীয় রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাবই ফেলবে না। এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যেমন সরকার পতনের বড় কোনো আন্দোলনে যেতে পারবে না। তেমনি আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা পাবে না। সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন বলেই মনে করেন এই বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সিটি নির্বাচন বা স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় অনেক বিষয় প্রভাব ফেলে। সিটি নির্বাচনের ছোট পরিসরে মানুষ দেখে কোন নগরপিতা কী উন্নয়ন করেছেন। জাতীয় উন্নয়ন নয় বরং স্থানীয় উন্নয়নই বড় প্রভাব ফেলে সিটি নির্বাচনে। আর এর ধারাবাহিকতায় নগরবাসীকে কে মেয়র হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা আদায় করে দিতে পারবেন-তাও ভেবে দেখে মানুষ। অপর দিকে জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ জাতীয় ইস্যু নিয়ে রাজনীতির বিষয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সিটি নির্বাচন আসলে এক মনস্তাত্বিক প্রশান্তির জায়গা হতে পারে কিন্তু কোনো প্রেরণার বা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাবের কোনো বিষয় এতে থাকবে না। সিটি নির্বাচনে জয় জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় এক সান্ত্বনা পুরস্কার বই বাড়তি কিছু নয়।
জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। তারা কি করবে? তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কেমন হবে? এগুলোই মূল বিষয়। সিটি নির্বাচনের ফলাফল কোনো দলের জাতীয় পর্যায়ে জয়ের কোনো ফ্যাক্টরই হতে পারে না। জাতীয় নির্বাচনে সিটিতে জয়ীরাই ভালো করবে এমন ধারণা যে ভুল তা পূর্ব ইতিহাসই বলে দেয়।
২০১৪ সালের আগে সব সিটি নির্বাচনেই বিএনপি জয়ী হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণই করেনি। ওই জয় কোনো কাজেই লাগেনি। বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে দেশে, যেখানে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসেছে। আর ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে মাত্র কয়েক বছরের মাথায় অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে বিএনপি। আবার পাঁচটি সিটিতে ভরাডুবির পরও আওয়ামী লীগ এখন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়। সেখানে সব সিটিতে জয়ী হয়েও মহাসংকটে বিএনপি।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।