নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৮ পিএম, ০১ অগাস্ট, ২০১৮
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে গত রোববার বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর পরদিন থেকেই নিরাপদ সড়ক ও নিজের সহপাঠীদের হত্যাকারী বাস চালকের বিচারের দাবিতে রাজপথ দখল করে আন্দোলন করছে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন রুটের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে তারা। এই আন্দোলন ধীরে ধীরে সহিংস রূপ ধারণ করছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যে নয় দফা দাবি দিয়েছে তা পূরণে গাফিলতি এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব করার কারণে এই আন্দোলন সহিংসতার দিকে ধাবিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার তিন দিন পর আজ বুধবার নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আজ বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিউর রহমান এ ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দেরি কেন করলেন। দূর্ঘটনা ঘটার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ছাত্র বিক্ষোভ অনেকটাই শান্ত হয়ে যেত।
সরকারের কতিপয় মন্ত্রী এই ঘটনায় দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বললেও তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে কোনো আলোচনা করছেন না, কোনো প্রকার আশ্বাসও দিচ্ছেন না।
এছাড়া রোববারে দুর্ঘটনা ঘটার পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতা ও নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে এই দুর্ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের জবাবে হেসে হেসে জবাব দেন মন্ত্রী। মৃত্যুর ঘটনায় নৌ পরিবহনমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। খোদ প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় বিরক্ত হন। এই ঘটনায় শাজাহান খানের উচিত ছিল যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমা প্রার্থনা করা। কিন্তু ক্ষমা চাইতেও বিলম্ব করেন তিনি। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের প্রতিনিধি সভায় তিনি বলেন, হাসির ঘটনায় কেউ মর্মাহত হলে তিনি ক্ষমা প্রার্থী।
দুর্ঘটনা ঘটার পরদিনই জাবালে নূর পরিবহনের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। কিন্তু ঘটনার মূল হোতা বাসচালককে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে আদালতকে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও মূল ঘাতককে গ্রেপ্তার করতে না পারাও এমন একটি ঘটনা যা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের আগুনকে উসকে দিয়েছে।
এই ক্ষোভ ধীরে ধীরে সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। আজ সারা ঢাকা শহর অচল করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এই সহিংসতায় ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থী যেমন দেখা গেছে, তেমনি দেখা গেছে এমন কিছু ব্যক্তিকে যাদের দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল তাঁরা শিক্ষার্থী নয়। শিক্ষার্থীরা কাচা হাতে বাসের গ্লাস ভাঙলেও এই ব্যক্তিরা বাস পুড়িয়েছে পাকা হাতে। এই সব কিছুই এড়ানো যেত যদি ঘাতক বাস চালক গ্রেপ্তার, জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল ও নৌ পরিবহন মন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনার মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো সময়মতো নেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার কিছু গুরুত্বপুর্ণ ইস্যুতে সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এমন সময়ে নেওয়া হচ্ছে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের সময়েও যথাযথ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভাবে আন্দোলনটি সহিংস আকার ধারণ করে এবং সাধারণ ছাত্রদের হাত থেকে দেশবিরোধী জামাত-শিবিরের হাতে চলে যায়। এক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে এমনভাবে দেরি করতে থাকলে আন্দোলনটি আবার দেশবিরোধী চক্রের হাতে চলে যেতে পারে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে তাই আওয়ামী লীগ সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিবেচনাবোধের পরিচয় দিতে হবে ও সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।