নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০২ অগাস্ট, ২০১৮
জরুরি কাজে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে প্রাইভেটকারে ধানমন্ডি থেকে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন রহমান সাহেব। সিটি কলেজের কাছে পৌঁছানোর পর মোড়ে একদল শিক্ষার্থী তাঁর গাড়ি আটকে লাইসেন্স দেখতে চায়। লাইসেন্স ঠিকঠাক থাকায় গাড়িটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি লক্ষ্য করেন, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড়ে মোটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন যুবক। যুবকদের অনেকের গালে হালকা দাঁড়ি, কারও কারও গালে নেই। এদের দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এরা শিক্ষার্থী নয়। এই যুবকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি দিচ্ছে, ছোট ছোট প্যাকেটে খাবার সরবরাহ করছে। কৌতুহলবশত গাড়ি ঘুরিয়ে যুবকদের সামনে আসলেন তিনি, জিজ্ঞেস করেন তাদের পরিচয়। জবাবে যুবকরা জানায়, তাঁরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। কিন্তু যুবকদের ভাবগতিক দেখে যে কেউই বুঝতে পারবে, তাঁরা অভিভাবক নয়।
শুধু সিটি কলেজ এলাকায় নয়, রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশেপাশে অনেকগুলো মোটর সাইকেল ও যুবকদের দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, সংঘবদ্ধভাবে একটি চক্র শিক্ষার্থীদের উসকে দিতে মাঠে নেমেছে।
সচিবালয় থেকে বেরিয়ে রহমান সাহেব পান্থপথের দিকে গেলেন। সেখানেও তীব্র যানজট। বাসচাপায় শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের জেরে সারা শহরের মতো পান্থপথ এলাকাও অচল হয়ে পড়েছে। পান্থপথেও গাড়ির লাইসেন্স চেক করছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। শুধু পান্থপথ নয়, এয়ারপোর্টেও লাইসেন্স চেক করছে তারা। এয়ারপোর্ট থেকে পান্থপথের দূরত্ব অনেক। কিন্তু সব এলাকায় আন্দোলনকারীদের কার্যক্রমের ধরন একই হলো কী করে? রাজনৈতিকভাবে সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হঠাৎ করে রাস্তায় নেমে যাওয়া। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনায় স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, এই আন্দোলনের কর্মকাণ্ডগুলো খুব সুসংগঠিত। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই যে দাবি করা হচ্ছে এটি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, এই দাবির সত্যতা কতটুকু? এমন প্রশ্ন শুধু রহমান সাহেবের একার নয় তাঁর মতো অনেকেরই। জানা গেছে, আজ সাভারেও গাড়ির লাইসেন্স চেক করা হচ্ছে। এবং সেখানেও আছে অভিভাবকরূপী কিছু যুবকের উপস্থিতি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে নয় দফা দাবিও জানিয়েছে। এই নয় দফা কারা প্রণয়ন করল? স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা এসব দফা প্রণয়নে সক্ষম কী না তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। রাজধানীর সব জায়গায় একই সঙ্গে গাড়ির লাইসেন্স চেক করা, এত কঠিন সব দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়া তা এই বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মানানসই নয়। এই থেকে বোঝা যায়, আন্দোলনের নাটাইটা অন্য কারও হাতে আছে। কিন্তু তাঁরা কে বা কারা? এই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে যদি চিহ্নিত না করা যায় তবে রাষ্ট্র আশু বিপদের সম্মুখীন হবে। আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এই আন্দোলনের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ এই আন্দোলকে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করার আর সুযোগ নেই।
শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘাতক বাস জাবালে নূরের মালিক ও ঘাতক চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রী নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এছাড়া সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন করার ঘোষণা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কার্যালয়ে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও অনুমোদন করেছেন। কিন্তু এখনো শিক্ষার্থীরা শান্ত হচ্ছে না। তাই একে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, কেউ এই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে। কোন পক্ষ থেকে এই ইন্ধন আসছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ইন্ধনটি যে আসছে এবং এতে রহস্যময় মোটর সাইকেলের ভূমিকা আছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, প্রকাশ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তাঁরা দেশের বিভিন্ন শহরের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোতে নিজস্ব নামে অথবা বিভিন্ন সংগঠনের নামে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিবির দলে সদস্য অর্ন্তভুক্তি করে এমনকি শিশু বয়সীদের মধ্য থেকেও। এই উদ্দেশ্যে শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসর পরিচালনা করে তাঁরা। রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি কার্যক্রমেও ব্যাপকভাবে সক্রিয় শিবির কর্মীরা। এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাথী শিক্ষাশিবির নামে এক ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা। অর্থ্যাৎ স্কুল-কলেজেও কিন্তু ছাত্রশিবিরের নীতিতে বিশ্বাসী অনেক ছেলেমেয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে শিবির ভাবধারার ছেলেমেয়েরা মিশে গিয়ে যদি আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে তবে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। কারা আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে, কারা কলকাঠি নাড়ছে তা যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে। কারণ আন্দোলনে ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করতে না পারলে নিরাপদ সড়কের দাবি বাস্তবায়নে সরকার যতই পদক্ষেপ নিক, যতই প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিক এই আন্দোলন কোনোভাবেই শান্ত হবে না। এই আন্দোলনটি যে আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই, আন্দোলনের চার দিনের মাথায় গিয়ে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।