নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ১৬ অগাস্ট, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। আগামী অক্টোবরেই ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। ডিসেম্বরেই হতে পারে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে জয়ী হলে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের জন্য জোড় প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন মনোনয়নের লক্ষ্যে করা হয়েছে একাধিক জরিপ। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার আসনই নড়বড়ে। নেতাদের এসব আসন নিয়ে অনিশ্চয়তার মূল কারণ দলীয় কোন্দল। এছাড়া নেতাদের প্রতি তৃণমূল ও স্থানীয় জনগণের বিরূপ মনোভাবও দেখা গেছে।
নড়বড়ে আসনের নেতাদের মধ্যে শুরুতেই আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সারাদেশ ঘুরে বেড়ান ওবায়দুল কাদের, সব জায়গার খোঁজ খবর নেন। অথচ নিজ আসন নোয়াখালী-৫ এ তাঁর অবস্থা টলটলায়মান। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ওই আসনে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী -৫ এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর হাতে। ওবায়দুল কাদের এলাকায় না যাওয়াতেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন নোয়াখালী -৫ এ ওবায়দুল কাদের জয় পরাজয় পুরোটাই নির্ভর করছে একরাম চৌধুরীর ওপর। আর সম্প্রতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নোয়াখালী যাওয়ার পর তাঁর গাড়িবহর চলাচলে বাধা দেওয়ার স্থানীয় জনগণও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর কিছুটা ক্ষুব্ধ।
নড়বড়ে আসনের আরেক নেতা হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। কুষ্টিয়া-৩ আসনে তাঁর অবস্থা নাজুকই বলছে জরিপ। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে হানিফের বিরোধ। আর এই বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দুজন দুজনার ক্ষতি করাকেই ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। জনগণের ভোট পাওয়ার চেয়ে কে কার ক্ষতি করবেন তা নিয়েই দুজন ব্যস্ত।
আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের আসনও নড়বড়ে। নিজ এলাকা ঢাকা-১৩ এর অনেক উন্নতি করেছেন। কিন্তু জনগণের মধ্যে তাঁকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগেরই আরেক নেতা সাদেক খান। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীর কবীর নানককে আর মানতে চাইছেন না সাদেক খান। স্থানীয় কোনো অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীর কবির নানক থাকলে সাদেক খান সেখানে অনুপস্থিত। আবার সাদেক খানের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়না নানককে। স্থানীয় সূত্র বলছে, সাদেক খান যেন জীবনের ব্রত করে নিয়েছেন যেকোনো মূল্যে জাহাঙ্গীর কবির নানককে নির্বাচনে হারাবেন। এই সমস্যা দূর করতে একাধিক বার দলের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির চাঁদপুর-৩ আসনও নড়বড়ে। জরিপ সূত্রে জানা গেছে, দীপু মনির আসনে সাধারণ জনগণের মধ্যে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ। আর স্থানীয় সূত্র বলছে, এই ক্ষোভের মূল কারণ স্বজনপ্রীতি। দীপু মনির বিরুদ্ধে প্রচণ্ড স্বজনপ্রীতির অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের। জানা গেছে, নিজের ভাইকেই নির্বাচনী এজেন্ট করেছেন দীপু মনি। এছাড়া অনেক কমিটিতেই স্থানীয় নেতাদের বাদ দিয়ে দীপু মনির স্বজনদের অনুপ্রবেশ তৃণমূলের নেতাদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আর দীপু মনির বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এছাড়া জামাত-বিএনপিও দীপু মনির স্বজনদের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে বলে স্থানীয় নেতাদের দাবি। একই সঙ্গে জন-সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণেই দীপুর মনির আসনের নড়বড়ে অবস্থা বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ চারজন নেতাদের অবস্থা এমন। শুধু এরা চারজনই নন, এমন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আছেন, যাঁদের অবস্থান এলাকায় ভালো না। অথচ, এরপরও তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতা। আর এই বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। এমন অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনে আসার জন্য এখনো বেশ সময় আছে। এই সময়ের মধ্যেই অবস্থার উন্নয়নে সব চেষ্টাই করা হবে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।