নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ১৮ অগাস্ট, ২০১৮
হঠাৎ করেই রাজনীতিতে ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আবার সোচ্চার। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি দেশে নতুন করে ওয়ান-ইলেভেন ঘটানোর চক্রান্ত করছে। অন্যদিকে একই দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য অবিলম্বে আওয়ামী লীগের পদত্যাগ করা উচিত।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মুখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। সে সময় দেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল। সর্বশেষ অবসর প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হওয়ার সাংবিধানিক বিধান ছিল। বিচারপতি কে. এম. হাসান যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে পারে সেজন্য বিএনপি প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করে। আওয়ামী লীগ স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, বিচারপতি কে. এম হাসানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারা মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ তীব্র আন্দোলন শুরু করে। তীব্র আন্দোলনের মুখে কে. এম. হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবেন না বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ অনুসরণ না করে, রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগ তাঁকে পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু একের পর এক পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের ফলে ইয়াজউদ্দিন বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। এসময় এরশাদকে একটি মামলায় দণ্ডিত করে হাইকোর্ট তাঁকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করে। এরপর সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় । অন্যদিকে, বিএনপির অনুগত ড. ইয়াজউদ্দিন যেকোনো মূল্যে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানে অটল থাকেন। অস্থির, নৈরাজ্যকর এবং ভয়াল একটি রাজনৈতিক পরিবেশে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের সুশীল সমাজের একাংশ মিলে একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব তৈরি করে। আর সেনাবাহিনী তাতে সমর্থন দেয়। আপাত দৃষ্টিতে ওয়ান ইলেভেনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং দু:সহ জনজীবন থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়া। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশকে প্রস্তুত করা। কিন্তু ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ঐ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেই রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। নির্বাচনের বদলে অনির্বাচিত সরকারটি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা শুরু করে। এসময় তাঁরা দুই নেত্রীকে মাইনাস করার রাজনৈতিক কৌশলও গ্রহণ করে। সুশীল সমাজ নিয়ন্ত্রিত একটি অনির্বাচিত সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনার এই মনোভাব জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। দুই নেত্রীকে জেলে নিয়েও শেষ পর্যন্ত ঐ অনির্বাচিত সরকার দুবছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে কি আরেকটি ওয়ান ইলেভেন আসার আশঙ্কা রয়েছে? একথা অনস্বীকার্য যে, ওয়ান ইলেভেন আনতে যে দূতাবাসগুলো সক্রিয় ছিল তাঁদের মধ্যে একমাত্র ভারত ছাড়া বাকি সবাই সক্রিয়। দূতাবাসগুলো একের পর এক বৈঠক করছে সুশীল সমাজের সঙ্গে। শুধু দূতাবাসগুলোই নয়, সুশীল সমাজের যে অংশটি ওয়ান ইলেভেন আনতে সক্রিয় ছিল, তারা আবারও তৎপর। কিন্তু ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পেছনে আরও দুটি উপাদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি হলো রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং সহিংসতা। অন্যটি সেনাবাহিনীর ভূমিকা। দেশে এখন কোনো রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নেই। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে মানুষ সন্ত্রাস এবং সহিংসতার রাজনীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। জ্বালাও পোড়াও করার শক্তি ও সাহস দেশের বিরোধী দলের নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এখন ২০০৭ সালের সেনাবাহিনী নয়। সেনাবাহিনী এখন অনেক পেশাদার, দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন।
আর সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আর ওয়ান ইলেভেন আসার সুযোগ নেই। সংবিধানের ৭ (ক) অনুচ্ছেদে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা গ্রহণকে রাষ্ট্রোদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই ওয়ান ইলেভেন এখন কেবল এক শ্লোগান আর রাজনৈতিক স্টান। বাস্তবে বাংলাদেশে আবার ওয়ান ইলেভেন আসার সুযোগ খুবই কম।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।