নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১০ এএম, ২১ অগাস্ট, ২০১৮
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই হামলায় সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও ২৪ জন নিহত হয়। সেদিনের সেই নারকীয় হামলায় দেশ ও বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় কিন্তু এই ঘটনার তদন্তে গড়িমসি করে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার। সে বছরের ২ অক্টোবর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির ১৬২ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করলেও বিএনপি-জামাত-শাসনামলে এই হামলার কোনো চার্জশিট দেওয়া হয়নি।
২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে এ মামলা তদন্তের উদ্যোগ নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তদন্ত শেষে সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর ২০০৮ সালের ১১ জুলাই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে দুটি চার্জশিট জমা দেন। এই চার্জশিটে ২২ জনকে আসামি করা হয় যার মধ্যে জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়া বাকি সবাই হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি।
এই চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আবদুস সালাম পিন্টুর সহযোগিতায় হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সিআইডির মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সিআইডি ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে উল্লেখিত আসামিরা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম ও মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বকশ চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও সাবেক এসপি মো. ওবায়দুর রহমান, জোট সরকারের আমলে মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং হুজি-বির ১০ নেতা।
নিরপেক্ষ চার্জশিটে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা বারবার উঠে এসেছে। তারেক জিয়া ছাড়াও তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের নেতা ওই হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া হামলার পরিকল্পনা করার জন্য যে সকল স্থান বেছে নিয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা তাও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে। চার্জশিট অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে বসেই ২১ আগস্টের হামলার মূল পরিকল্পনা করা হয়। হাওয়া ভবনের বৈঠকে তারেক রহমান আসামিদের ঘটনা বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার ব্যপারে আশ্বস্ত করেন। হাওয়া ভবনে বসেই তারেক জিয়া, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিস চৌধুরী, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ কায়কোবাদ, জামাত নেতা মুজাহিদ ও জঙ্গি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানরা শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা প্রনয়ন করেন।
হাওয়া ভবন ছাড়াও অন্যতম আসামি জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ-ই আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারেরর উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির সরকারি বাসাসহ আটটি স্থানে বৈঠক করে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করা হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ আছে।
এছাড়া তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতিতে হুজির নেতাদের পরিকল্পনা সভা, হামলার আগের দিন সকালেও আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা তাহের, কাজলসহ অন্যান্য আসামিরা জড়ো হয়ে ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার বাসায় ২১ আগস্টে হামলা চালাতে কারা অংশ নিবে সে বিষয়ে বৈঠক ও পরিকল্পনার কথাও লিপিবদ্ধ হয়েছে চার্জশিটে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চার্জশিটে অভিযুক্ত ৫২ জন আসামির মধ্যে ১৯ জন পলাতক, ৮ জন জামিনে এবং বাকিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। গ্রেনেড হামলার মূল হোতা তারেক জিয়াও অনেক দিন যাবৎ পলাতক অবস্থায় লন্ডনে অবস্থান করছেন।
গ্রেনেড হামলার প্রথম চার্জশিটে সাক্ষী হিসেবে ৪০৮ জনকে, দ্বিতীয় চার্জশিটে ৮২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় মোট ৪৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এই পর্যন্ত মোট ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।