নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীদল। গতকাল রাতে জেএসডি নেতা আ.স.ম আব্দুর রবের উত্তরার বাসায় যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আগামীকাল শনিবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বৈঠকে আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশকে ঘিরেই কর্মসূচী সাজানো হয়েছে। এর আগে যুক্তফ্রন্ট এবং ঐক্য প্রক্রিয়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ড. কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের বিভাগীয় শহরে জনসভা করবেন বলেও জানা গেছে। যুক্তফ্রন্ট সূত্রগুলো বলছে, ২২ সেপ্টেম্বরে ড. কামাল হোসেনের জনসভায় যুক্তফ্রন্ট নেতারা যোগ দেবেন। একই সমাবেশে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। ঐ বৈঠক থেকেই নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী যোগাযোগ করেন। তিনি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন যে তিনি গণফোরামের সমাবেশে যোগ দেবেন। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, জামাতকে নিয়ে ঐক্য হবে না। এই বক্তব্য রাখার পাশাপাশি বিএনপিকে অবশ্যই জাতীয় ঐক্যে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের একজন নেতা বলেন, ‘আমাদের সব দলের মিলে তো এক হাজার লোকও জোগাড় করা সম্ভব না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবেন কিভাবে?’ এসময় ড. কামাল হোসেনও স্বীকার করেন যে, ‘বিএনপিকে লাগবে। আমাদের উদ্যোগকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানাচ্ছে। আমাকে অনেকেই বলেছে, আপনি আমাদের মনের কথা বলেছেন। কিন্তু মানুষ রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে চায় না।’ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এজন্য বিএনপিকে লাগবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ২২ সেপ্টেম্বরের জনসভা থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক মাসের কর্মসূচী নিয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘আবার বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আন্দোলন চাই না। ক্ষমতার ভারসাম্য চাই। তাই আন্দোলন শুরুর আগেই আমাদের নির্বাচন এবং সরকার নিয়ে ভাবতে হবে।’ যুক্তফ্রন্টের অন্য নেতারাও তাদের সঙ্গে একমত হন। ড. কামাল হোসেন ২২ সেপ্টেম্বরের পর বিএনপির সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপিতো বলেছে তারা ঐক্য চায়। ঐক্যের জন্য তাঁরা সর্বোচ্চ ত্যাগও স্বীকার করতেও চায়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য বিএনপিকে মাথায় রেখেই আন্দোলনের ছক কষছে। এখন বিএনপি তাদের জন্য কতটা ছাড় দেয়, তাঁর ওপরই নির্ভর করছে, জাতীয় ঐক্যের ভবিষ্যৎ।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন