নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। যুক্তফ্রন্ট এবং ঐক্য প্রক্রিয়ায় কে কার লোক তা নিয়ে চর্চা চলছে। এখানে একেক জন একেক এজেন্ডা নিয়ে এসেছে বলে কথা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেন ড. ইউনূসের প্রতিনিধি হেসেবে জোটভুক্ত হয়েছেন। মান্না জোটে এসেছেন বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। আর মাহী বি. চৌধুরী হলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি। এই তিনজনের উদ্দেশ্য ভিন্ন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে এবং ড. ইউনূসের পৃষ্ঠপোষকতায় মাঠে নেমেছেন গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন। তাঁর পিছনে আছে সুশীল সমাজের সমাজের কিছু চিহ্নিত মুখ। ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্য করতে আসেননি। একাধিক সূত্র বলছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন বানচাল করে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনাই ড. কামাল হোসেনের মূল লক্ষ্য। এজন্যই তিনি বিএনপিকে ঐক্য প্রক্রিয়ায় চান। আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টিই ড. কামাল ও ড. ইউনূসের মূল লক্ষ্য। এজন্য তিনি এত সরব। ড. কামাল সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত দুটি বক্তৃতায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গে এক মত বিনিময়ে তিনি বিচারপতি সিনহার পক্ষেও কথা বলেছেন। তিনি (ড. কামাল হোসেন) এবং বিচারপতি সিনহা মিলে একটি ‘সাংবিধানিক ক্যু’ করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে।
ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম সক্রিয় নেতা সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। যুক্তফ্রন্টের নেতারাই তাকে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে ডাকে। যুক্তফ্রন্টের বৈঠকে তিনি বিএনপির পক্ষেই কথা বলেন। তারেক জিয়ার সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। মান্না বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী। মান্না মনে করেন, ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করলে বর্তমান সরকারের পরাজয় অনিবার্য। বিএনপি যেমন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছে, হঠাৎ নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগকে চমকে দিতে চায়। তেমনি মান্নাও নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে একঘরে করতেই বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে। ঐক্য প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি মনে করা হয় মাহী বি. চৌধুরীকে। মাহীর জন্যই যুক্তফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে জামাত ছাড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঐক্য হলে বিএনপির শরিকদের দেড়শ আসন ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব মাহী বি. চৌধুরীর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মাহীর লক্ষ্য হলো সব দল গুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং বিএনপির বড় একটি অংশকে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সেক্যুলার বিরোধী দল গঠন। যুক্তফ্রন্ট এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একাংশকে নিয়ে নির্বাচনে যাওয়াই মাহীর এজেন্ডা। তবে তিনি নেপথ্যে থেকেই কাজ করছেন। তাঁর ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়নে প্রকাশ্যে কথা বলছেন তাঁর পিতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। জানা গেছে, ছেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছুই করেন না বি. চৌধুরী। এ কারণেই ১৫ সেপ্টেম্বর ঐক্য প্রক্রিয়ায় যাননি অধ্যাপক চৌধুরী।
এই ত্রিমুখী এজেন্ডায় শেষ পর্যন্ত কার এজেন্ডা জয়ী হয় অথবা শেষ পর্যন্ত কোন ঐক্য থাকে কিনা সেটিই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন