নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের জন্য দণ্ডিত হয়ে প্রায় আট মাস ধরে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়া যেকোনো শর্তে মুক্তি পেতে রাজি আছেন। নির্বাচনে না যাওয়ার শর্তেও মুক্তিতে আপত্তি নেই বিএনপি চেয়ারপারসনের। তবে নির্বাচনকে ঘিরে খালেদা জিয়া বিষয়ে বিএনপি, সুনির্দিষ্টভাবে বললে খালেদা জিয়ার পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। তারেক জিয়া মনে করছেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি লাভের বিষয়টি মুখ্য নয় বরং তিনি জেলে থাকলেই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে বিএনপি।
খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলা হাইকোর্টে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। ৩১অক্টোবরের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট যা আগে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে হাইকোর্ট বন্ধ রয়েছে, ১ অক্টোবর সোমবারের আগে হাইকোর্ট খুলবে না। হাইকোর্ট খোলার পর এই মামলা বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের দ্বৈত বেঞ্চে উঠবে। এই বিষয়ে বিএনপির কৌশল হচ্ছে, জিয়া এতিমখানা মামলাটির বিচারকাজ বিলম্বিত করতে করতে ৩১ অক্টোবর পার করে দেওয়া। এর পাশাপাশি বেগম জিয়ার দণ্ড মওকুফের জন্য পিটিশন করারও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এই মামলায় দণ্ড মওকুফ হয়ে গেলে খালেদা জিয়ার সামনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এতিমখানা দুর্নীতি মামলার পাশাপাশি খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাও আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এই মামলার শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে হাজিরা দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। এমনকি কারাগারে আদালত স্থাপন করার পরও খালেদা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাচ্ছেন না। এক্ষেত্রেও বিএনপির আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন, এই মামলাটিতে যেন কোনো ভাবে রায় না হয়। কারণ সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, যেকোনো আদালত থেকে দণ্ডিত হলেই কোনো ব্যক্তি আর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু আদালত কর্তৃক খালেদার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আসায় তাঁর অনুপস্থিতির কৌশলটিও কার্যকারিতা হারাতে বসেছে। তাই মামলাটিকে বিলম্বিত করার কৌশলে আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে আবার হাইকোর্টে যাবে বিএনপি।
বিএনপির আইনজীবীরা মনে করছেন, বিভিন্ন মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে কোনো চাপ নেই। বরং তাঁকে নির্বাচনের জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হলো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। তারেক জিয়ার মতে, মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে কারারুদ্ধ খালেদা জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারলে ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য ভোট দিন’ এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইন করতে পারবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনুমতি পেলে তাঁকে পাঁচটি আসনে মনোনয়ন দিয়ে জয়যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। বিএনপি বিশ্বাস করে, তাঁদের চেয়ারপারসন নির্বাচনে দাঁড়ালে নির্বাচনে একটি জোয়ার আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বিএনপি হয়তো বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে, কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচন করলে সব কিছুই জাদুকরী ভাবে বদলে যাবে বলে মনে করে দলটি। এই বিবেচনা থেকে বিএনপি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোকে যেকোনো ভাবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিলম্বিত করার রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। কারণ ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন আর তফসিল ঘোষণার পর দায়িত্ব নেবে নির্বাচনকালীন সরকার। তাই ৩১ অক্টোবর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত খালেদা জিয়া যদি আর কোনো মামলায় দণ্ডিত না হন এবং হাইকোর্টে যে মামলাটি চলমান তার নিষ্পত্তিও যদি না হয় তাহলে খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে পারবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে প্রার্থী করে জনগণের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটাই এখন বিএনপির মূল কৌশল।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।