ইনসাইড পলিটিক্স

নিজের দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করলেন ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮


Thumbnail

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় নেতা হিসেবে জোটের অন্যতম রাজনৈতিক দল গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে সবাই মেনে নিয়েছেন। স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে গণফোরামের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে কিছু লক্ষ্য, নীতি ও আদর্শ লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, গণফোরাম যাদের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠন করেছে সেই দলগুলোর নীতি-আদর্শের সঙ্গে গণফোরামের নীতি-আদর্শ সাংঘর্ষিক।

গণফোরামের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যাক। গণফোরামের ঘোষণাপত্রের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দানকারী নেতাই নন, তিনি এ জাতির জনক হিসবেও দেশে বিদেশে নন্দিত।’ কিন্তু জাতীয় ঐক্যের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক কিংবা জাতির পিতা – কোনোটাই মানে না। এছাড়া নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতে ইসলামীও বেনামে এই জোটে সক্রিয় আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবিশ্বাসী এই দলটি জাতির পিতা ও স্বাধীনতার ঘোষক প্রশ্নে কী মনোভাব পোষণ করে তা সর্বজনবিদিত।

গণফোরামের ঘোষণাপত্রের ভূমিকায় আরও বলা হয়েছে, ‘এই আশা আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণভাবে বিবৃত ১৯৭২ সালের সংবিধানে। সাম্প্রদায়িকতার চির অবসান হবে এবং সকল সাম্প্রদায়িক বৈষম্য দূরীভূত হবে।’

কিন্তু জোটের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ’৭২ এর সংবিধানের বিরোধী। নিজেকে ’৭২ এর সংবিধানের সমর্থক দাবি করা ড. কামাল হোসেন কীভাবে বিএনপির সঙ্গে জোট করতে পারেন তা রাজনৈতিক মহলের বড় একটি প্রশ্ন।

গণফোরামের ঘোষণাপত্রের ‘লক্ষ্য, আদর্শ ও উদ্দেশ্য’ শিরোনামের প্রথম অধ্যায়ের ‘ঘ ধারায়’ বলা হয়েছে, গণফোরামের লক্ষ্য ‘অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে দৃঢ়মূল ও বিকশিত করা এবং দেশের পাহাড়ি, আদিবাসী ও অন্যান্য অবহেলিত সম্প্রদায়সমূহের সার্বিক বিকাশের অধিকার সুনিশ্চিত করা।’

কিন্তু গণফোরামের নতুন মিত্র জাতীয় ঐক্যের অন্যতম শরিক দল বিএনপি বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে না, দলটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী।

এছাড়া প্রথম অধ্যায়ের ‘ণ ধারায়’ গণফোরামের লক্ষ্য হিসেবে বিবৃত হয়েছে, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলে আন্দোলন সংগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ঐ সংগ্রামকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলে সর্বত্র অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সু-প্রতিষ্ঠিত করা। ধর্মের নামে রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা।’

কিন্তু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো উগ্রপন্থী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেই ড. কামাল হোসেন জোট করেছেন যা তাদের ঘোষণাপত্রের বর্ণিত নীতি অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি সু-প্রতিষ্ঠিত করা এবং ধর্মের নামে রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার একদমই বিপরীত।

‘বিচার বিভাগ ও আইন সংক্রান্ত’ শিরোনামে ঘোষণাপত্রের পঞ্চম অধ্যায়ের ‘জ ধারায়’ বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিল ও ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান পুনঃস্থাপন করা হবে।’

অথচ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর ওপর ভিত্তি করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিতে এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ আদালত যখন পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছে সেই রায়ের প্রতিবাদ করেছে বিএনপি। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবীর লিভ টু আপিল করেছিলেন।

গণফোরামের ঘোষণাপত্রের ‘নির্বাচন’ শিরোনামের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ‘খ ধারায়’ বলা হয়েছে, ‘যে সকল দল সশস্ত্র সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতনকারী, কালো টাকার মালিক, ঋণখেলাপী ও দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে তাদের ঐ সকল অপরাধে লিপ্ত প্রার্থীদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। ধর্মকেও রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করা অনেক নেতা জামায়াতে ইসলামী, এমনকি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার। এদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নিজের সন্ত্রাসবিরোধী, নারী নির্যাতন বিরোধী নীতি কতটুকু রক্ষা করতে পারলেন তা একটি জরুরি প্রশ্ন। এছাড়া বিএনপিতে অনেক ঋণখেলাপী ও দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদও রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক জিয়া দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। এমনকি এই দুই দুর্নীতিবাজ নেতাকে নির্বাচন করার সুযোগ দিতে বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রও সংশোধন করেছিল। এমন একটি দুর্নীতিবাজ দলের সঙ্গে আঁতাত করে ড. কামাল নিজ দলের ঘোষণাপত্রের নীতিবিরুদ্ধ কাজ করেছেন।

একই অধ্যায়ের ‘গ ধারায়’ বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ আইনতঃ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মারফত তাদের উপযুক্ত শাস্তিও বিধান করা হবে।’

বিএনপিতেও অনেক যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। এছাড়া বেনামে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতে ইসলামীও ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এদের সঙ্গেই জোটবদ্ধ হয়ে ড. কামাল আরেকবার তাঁর দলীয় নীতি ভঙ্গ করেছেন।

আবার ‘নির্বাচন’ অধ্যায়েরই ‘ড ধারায়’ বর্ণিত আছে, ‘দুইটির অধিক আসনে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না মর্মে আইন করা হবে।’

কিন্তু ড. কামাল যাদের সঙ্গে জোট করলেন সেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সবসময় ৫টি আসনে নির্বাচন করে থাকেন। এক্ষেত্রে গণফোরামের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে গেল তাদের রাজনৈতিক মিত্রের নীতি।

‘নারী সমাজের উন্নয়ন’ শিরোনামে সপ্তম অধ্যায়ের ‘খ ধারায়’ বলা হয়েছে, ‘সরকারি বেসরকারি সকল চাকুরীতে নারীর জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে শতকরা ৩০ ভাগ আসন সংরক্ষণ এবং তা অবিলম্বে পূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’

অথচ বিসিএসসহ সকল সরকারি চাকরিতে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি কোটা বাতিলের পক্ষে কথা বলেছেন।  শুধু সরকার বিরোধিতার খাতিরে ক্ষমতার লোভে স্বার্থান্ধ হয়ে কোটা প্রসঙ্গে ড. কামাল নিজের দলের ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধেই চলে গেছেন।

ঘোষণাপত্রের নবম অধ্যায়ের শিরোনাম হচ্ছে, ‘ধর্মকর্ম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’। এই অধ্যায়ের ‘ক ধারায়’ বলা আছে, ‘ধর্ম নিয়ে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে রাষ্ট্র বিরত থাকবে।’ এছাড়া একই অধ্যায়ের ‘খ ধারায়’ বলা হয়েছে, ‘রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বা ধর্মের নামে সন্ত্রাস বে-আইনি বলে বিবেচিত হবে।’

কিন্তু গণফোরাম জোট করেছে একাধিক ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী দলের সঙ্গে। বিএনপিও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের জন্য পরিচিত। তাই গণফোরাম ঘোষণাপত্রের ‘ক’ ও ‘খ’ ধারার যথাযথ প্রয়োগ যে এই দলগুলোর সঙ্গে থেকে করা সম্ভব না তা বলাই বাহুল্য।

এ তো গেলো কেবল ঘোষণাপত্রের কথা। গণফোরামের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড তাদের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। 

গণফোরামের গঠনতন্ত্রের ২ নং অনুচ্ছেদে দলটির লক্ষ্য, আদর্শ ও উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের ‘ত ধারায়’ বলা হয়েছে, গণফোরামের আদর্শ ও উদ্দেশ্য হবে ‘সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত করা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্ববিধ পন্থায় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে নিরুৎসাহিত করা।’

এছাড়া একই অনুচ্ছেদের ‘প ধারায়’ বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা ও প্রসারে ভূমিকা রাখা। দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক এবং সামাজিক ন্যায়বিচার, প্রগতি ও উন্নয়নের ধারায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলির স্ব-স্ব অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দেশ, জাতি ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যের জন্য প্রয়াস অব্যাহত রাখা।’

কিন্তু গণফোরাম জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জোট করছে এমন কতগুলো উগ্রপন্থী ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে যারা জঙ্গিবাদ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছে। এছাড়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী রাজনীতির চর্চার কথা বলাই বাহুল্য। তাই বিএনপিসহ খেলাফত মজলিসের মতো আরও কয়েকটি বিতর্কিত দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নিজেদের গঠনতন্ত্রই লঙ্ঘন করলেন ড. কামাল হোসেন।

আবার গঠনতন্ত্রের ২ নং অনুচ্ছেদের ‘ফ ধারায়’ বলা হয়েছে, গণফোরামের উদ্দেশ্য ‘রাজনীতিকে অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র মুক্ত করা, আদর্শ ও কর্মসূচিমুখী এবং গ্রামোন্নয়নমুখী ও গণমুখী করা।’

কিন্তু বিএনপির অনেক রাজনীতিবিদই অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রের মালিক। এছাড়া বিএনপির প্রধান দুই নেতা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত। এমন দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ড. কামাল এই ক্ষেত্রেও দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করলেন।

গণফোরামের ৮ নং অনুচ্ছেদের শিরোনাম হচ্ছে ‘দলের শৃঙ্খলা’। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘দলের লক্ষ্য, আদর্শ, নীতি, গঠনতন্ত্র, কর্মসূচী বা দলের স্বার্থের পরিপন্থী এবং দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করলে তা শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট শাখা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারবে। তবে সেই সুপারিশের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সদস্যকে কারণ দর্শানো এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি শুনানি গ্রহণের পর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’

কিন্তু উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে, ড. কামাল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক উগ্রপন্থী দলের সঙ্গে জোট করে নিজ দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের অনেকগুলো ধারা লঙ্ঘন করেছেন। আমরা সবাই জানি, একটি দলের ঘোষণাপত্র হলো সেই দলের নীতি আদর্শের দলিল। সেই দলিলই লঙ্ঘন করেছেন ড. কামাল যার ফলে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু গণফোরাম প্রতিষ্ঠাতা ও দলটির দীর্ঘ ২৬ বছরের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কে?


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ  



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন যে, ১৪ দল বিলুপ্ত হয়নি, ১৪ দল আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফ জানিয়ে দিলেন, খুব শীঘ্রই তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। 

প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন যে, ১৪ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক নিয়মিত ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ১৪ দলের নেতাদেরকে উল্লসিত করেছে। তীব্র তাপদাহে যেন তাদের কাছে এক স্বস্তির বৃষ্টি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকরা এতিম হয়ে পড়েছিল। তারা কোথাও পাত্তা পাচ্ছিল না। মন্ত্রিসভাতে যেমন ১৪ দলের কাউকে রাখা হয়নি, ঠিক তেমনই সংরক্ষিত নারী আসনে যে ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেখানও ১৪ দলের কোন প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। ১৪ দলের নেতাদের এ বার নির্বাচনে বড় ধরনের ভরাডুবি ঘটেছে। হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশার মতো ১৪ দলের হেভিওয়েট নেতারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। এরপর ১৪ দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ১৪ দলের নেতারা সেই সময় থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি। এর মধ্যে ১৪ দলের বৈঠক নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলেও শরিকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং ১৪ দলের অন্তত তিনজন নেতা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ১৪ দল শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।

২০০১ সালে নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এই ১৪ দলীয় জোট গঠন করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর ১৪ দলের সদস্যদেরকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল। সেই সময় দিলীপ বড়ুয়া মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে গঠিত মন্ত্রিসভাতেও ১৪ দলের নেতা রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুকে রাখা হয়েছিল। এরপর থেকেই ১৪ দলের শরিকদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

এবার নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তিক্ততা সৃষ্টি হয় এবং তিক্ত অবস্থা রেখেই আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের জন্য মাত্র ৬টি আসন দেয়। শেষপর্যন্ত জোটের স্বার্থে ১৪ দল নির্বাচনে ওই কয়েকটি আসন নিয়ে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সেখানে ১৪ দলের অধিকাংশ নেতার বিপুল ভরাডুবি হয়। বিশেষ করে হাসানুল হক ইনু, ফজলে হোসেন বাদশা এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিপর্যয় ১৪ দলকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়। এমনকি শিরীন আখতারকে পরবর্তীতে সংরক্ষিত আসনের এমপি করা হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলেও জাসদের নেতারা দাবি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিরীন আখতারও সংরক্ষিত কোটায় এমপি হতে পারেননি। এরকম অবস্থায় ১৪ দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং হতাশা ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করলেন যে, তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বসবেন। 

তিনি বলেছেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার পর তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ১৪ দলের এই বৈঠকের নেতাদেরকে উল্লসিত করেছে। তারা এখন আশায় বুক বেঁধে আছেন। 

১৪ দলের নেতারা আসলে কর্মীহীন, অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে লতাপাতার মতো জড়িয়ে থেকে তারা কোন রকম অস্তিত্ব রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগ যদি তাদের থেকে ছাতা সরিয়ে নেয় তাহলে এই দলগুলো মৃত্যু ঘটবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ তাদেরকে জীবিত করার যেন মহৌষধ দিলেন।

১৪ দল   আওয়ামী লীগ   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

কমে গেল কাদেরের দাপট?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমন একজন নেতা যিনি ওবায়দুল কাদেরের এই সিদ্ধান্ত মানেননি। সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি ধানমণ্ডি ৩ নম্বর কার্যালয়ে গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের তোপের মুখে পড়েন। ওবায়দুল কাদের তাকে বলেন, আপনি তো দলের কোন সিদ্ধান্তই মানেন না। কিন্তু তার পরও শাজাহান খান তার ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে রাখেন এবং দলের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন আশঙ্কার মধ্যেই তিনি উপজেলা নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির সংবাদ সম্মেলনের পর দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের যে সিদ্ধান্ত তার মধ্যে দুস্তর ফারাক রয়েছে। ওবায়দুল কাদের যেভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন বাস্তবতা তা নয়। ওবায়দুল কাদের যত গর্জেছেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ তত বর্ষেনি। আর একারণেই এখন ওবায়দুল কাদেরের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।


এমনিতেই আওয়ামী লীগে বেশ কিছুদিন ধরে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির বাইরে অন্য কোন নেতার কথা তৃণমূলের আওয়ামী লীগ বা মাঠ পর্যায়ের নেতারা মোটেও কর্ণপাত করেন না। তাদেরকে খুব একটা আমলে নেন না। তারপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে কথা। তিনি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সেই ক্ষমতাবান ব্যক্তি যখন বলছেন, সকলে ধরে নিয়েছিল যে, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং ওবায়দুল কাদের এটিকে শেখ হাসিনার নির্দেশনা বলেই অভিহিত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা একরামুল করিম চৌধুরী, শাজাহান খান এবং ড. রাজ্জাকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন এবং তাদের স্বজনদেরকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই তিনজনের কেউই ওবায়দুল কাদেরের কথায় কর্ণপাত করেননি। 

ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা অমান্য করে তারা প্রার্থী হওয়ার পর এখন দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের অবস্থানই এখন আর সঠিক নেই। ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। অথচ ওবায়দুল কাদের একাধিক গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, ৩০ এপ্রিল যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই হয়নি। তাহলে কী ওবায়দুল কাদের বাড়িয়ে বলেছেন? 


কেউ কেউ দাবি করেন, যেহেতু একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সেহেতু ওবায়দুল কাদের বিষয়টিকে বড় করে দেখেছেন এবং তিনি নিজেই উপজেলা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। কারণ তার নির্বাচনী এলাকায় যদি একরামুল করিমের সন্তানও উপজেলা চেয়ারম্যান হয় তাহলে তার এলাকায় আধিপত্য কমে যাবে। আর একারণেই হয়তো তিনি বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই মনে হয় যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বিষয় নিয়ে গর্জে ছিলেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিষয়টিকে অতটুকু গুরুত্বতর মনে করেন না। বরং তার প্রধান আগ্রহের ব্যাপার হলো উপজেলা নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা সবসময় যা বলেন সেটিরই পুনঃউচ্চারণ করেন এই বক্তব্যটি ঠিক না। শেখ হাসিনা আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একই রকম বক্তব্য রাখেননি। আর এর ফলে ভবিষ্যতে ওবায়দুল কাদেরের হুশিয়ারি বা নির্দেশনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কতটুকু শুনবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন তাহলে কী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দাপট কমে গেল?




ওবায়দুল কাদের   আওয়ামী লীগ   সাধারণ সম্পাদক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে কী ধর্মঘট চলছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না। 

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সৌদি আরবে যাচ্ছেন ওমরা পালনের জন্য। অন্যান্য নেতারাও তীব্র গরমে বাসায় শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে আছেন। কোন নেতাই কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। একমাত্র আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলে আছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে আর্তনাদের মতো শোনাচ্ছে।


বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির মধ্যে এখন এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে এবং এই হতাশার কারণে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন বিরক্ত। 

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, মূলত তারেক জিয়ার খাম খেয়ালিপনা এবং স্ব-বিরোধী সিদ্ধান্তের জন্যই বিএনপি নেতারা বিরক্ত এবং নিজেদের হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। 


বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। সিদ্ধান্ত তিনি নিচ্ছেন, তিনি আমাদেরকে জানাচ্ছেন। কাজেই আমরা কী করব? স্থায়ী কমিটির আসলে কোন কাজ নেই। স্থায়ী কমিটিতে দূরের কথা, কেন্দ্রীয় কমিটিতেও কোন কাজ নেই। 

তিনি বলেন, বিএনপির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে উপজেলা নির্বাচনে তারা বর্জন করবে। কিন্তু যারা উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র অংশগ্রহণ করছে তাদের বহিষ্কারের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা ছিল সেই প্রক্রিয়ার কোনটাই অনুসরণ করা হয়নি। তাদেরকে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি এমন অন্তত ৫ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে যারা কাগজে কলমে বিএনপিও করে না। বিএনপি শুভাকাঙ্খী হিসেবে, বিএনপির সমর্থক হিসেবে  তারা পরিচিত। এই যদি হয় দলের অবস্থা তাহলে সেই দলে যে কোন কথা বলে বিপদ বলে মনে করেন ওই স্থায়ী কমিটির সদস্য। 

এরকম কথাবার্তা শোনা যায়, বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের মুখে। বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নতুন করে আন্দোলন শুরু করার কথা বলেছেন, বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু এ নিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন না কোন বিএনপির সদস্যরা। 


বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি বড় অংশ অসুস্থ অথবা অকার্যকর। স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠনের জন্য বলা হয়েছিল দু মাস আগে। তারেক জিয়া তখন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, স্থায়ী কমিটিতে ৫ জন সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ঐ বৈঠকে ঘোষণা করেছিলেন যে, এক মাসের মধ্যে স্থায়ী কমিটির শূণ্যপদ পূরণ করা হবে। কিন্তু ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও স্থায়ী কমিটির ঐ শূণ্যপদগুলো পূরণ করা হয়নি। বিএনপিতে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা ছিলো, সে কাউন্সিল নিয়েও তারেক জিয়া কোন রকম সিদ্ধান্ত দেননি। ফলে দলের নেতাকর্মীরা এখন গা ছেড়ে দিয়েছেন। 

বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, বিএনপিতে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এখন কারও নেই। যার কারণে সিদ্ধান্ত যদি না দিতে পারা যায়, তাহলে দলের হাল ধরাও কঠিন। আর তাই বিএনপি নেতারা হালও ধরছেন না সিদ্ধান্তও দিচ্ছেন না। তারা এক ধরনের অঘোষিত ধর্মঘটে আছেন।  


বিএনপি   ধর্মঘট   রাজনীতির খবর   তারেক জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

কেন পিছু হঠল আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে। 

প্রশ্ন উঠল, আওয়ামী লীগ কেন তারা অবস্থান থেকে সরে এলো বা কেন আওয়ামী লীগ আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থী করার বিষয়টি নিয়ে পিছু হঠল।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ ব্যাপারে একেক রকম মতামত দিয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি কখনোই আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না- এ ধরনের মনোভাব পোষণ করেননি বা সরাসরি এ ধরনের কথা বলেননি। তার বক্তব্য হয়তো আওয়ামী লীগের অনেকেই বুঝতে পারেননি এবং বোঝার চেষ্টা করেননি। শেখ হাসিনা কী বলতে চান তা আজ সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেছেন। 

তিনি বলেছেন, যারা মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যদের কথা। পরিবারের সদস্য বলতে তিনি সন্তান, স্ত্রী এবং পরিবারের মূল ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন। অন্য আত্মীয়দেরকে বোঝাননি। এখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের হয়তো বুঝতে ভুল হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদেরকে নির্বাচন করা যাবে না এমনটা বলেননি, বরং তিনি বলেছেন যে, তারা যেন তৃণমূলের অন্যান্য নেতাকর্মীদেরকেও সুযোগ দেয়। সবকিছু যেন তারা দখল করে না নেয়। 

তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা বিভিন্ন পদ পদবীতে আছেন বা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা নির্বাচন করবে না কেন? অর্থাৎ যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে, পৌরসভার মেয়র হিসেবে বা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে অর্থাৎ আগে থেকে রাজনীতি করছেন তারা নির্বাচন করলে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ ড. রাজ্জাক বা শাজাহান খানের তার ছেলে বা ভাই নির্বাচন করলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি সুস্পষ্ট ভাবে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না, মন্ত্রী-এমপি হওয়ার সুবাদে ছেলে বা স্ত্রীকে রাজনীতিতে টেনে আনায় আনা হয়েছে এবং এলাকায় দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এরকম ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এরকম ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইছেন এই সংখ্যা কত জন। ওই সাংবাদিক বলেছেন, জনা পঞ্চাশেক হবে। তিনি বলেছেন, এই সংখ্যা খুব কম নয়। 

তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার কারণে এলাকায় এক ধরনের উত্তেজনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে। একদিকে মন্ত্রী-এমপিদের প্রার্থী এবং অন্যদিকে মন্ত্রী-এমপিদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ঐক্য। সব কিছু মিলিয়ে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন মানেই হলো ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি। আর সেই ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী হয়তো তার কৌশলের ব্যাখ্যা দিলেন। আসলে আওয়ামী লীগের পিছু হঠা নয়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য একটাই। নির্বাচন যেন অর্থপূর্ণ হয়, ভোটার উপস্থিতি যেন বাড়ে। আর সে কারণেই আপাতত নির্দেশ অমান্যকারীদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যেমন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্রদের স্বাগত জানিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন   কার্যনির্বাহী কমিটি   ওবায়দুল কাদের   রাজনীতির খবর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এবার বিএনপির ৬১ নেতাকে শোকজ

প্রকাশ: ০৬:২৪ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৬১ নেতাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। 

বৃহস্পতিবার (২ মে) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে নেতাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শোকজ নেতাদের মধ্যে ২৫ জন চেয়ারম্যান পদে, ২০ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন অংশ নিয়েছেন।

শোকজ চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির নেতা হিসাবে আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি   শোকজ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন