নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৪ অক্টোবর, ২০১৮
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ‘শয়তান তত্ত্ব’ নিয়ে রাজনীতিতে এখন তোলপাড় চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন, শয়তান কে? বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বরের জনসভায় বলেছেন, ‘প্রয়োজনে বিএনপি শয়তানের সঙ্গে ঐক্য করবে।’ তাঁর এই বক্তব্যের পর রাজনীতিতে নানা মুখরোচক আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। যে মুহূর্তে যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির ঐক্য প্রচেষ্টা চলছে, সে মুহূর্তে গয়েশ্বরের এই মন্তব্যে বিএনপি নেতারাই বিব্রত। অবশ্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘একটা এক্সট্রিম অবস্থা বোঝাতে তিনি এরকম মন্তব্য করেছিলেন। কাউকে উদ্দেশ্য করে তিনি এটা বলেননি।’ গয়েশ্বর এটার যে ব্যাখ্যাই দেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এটা ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এরা এখনই এরকম কথা বলছে, ক্ষমতা পেলে কি করবে?’ অধ্যাপক চৌধুরী এ ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভ বিএনপি মহাসচিবকেই টেলিফোন করে বলেছেন। যদিও মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘এটি তাঁকে (বি. চৌধুরীকে) উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে জিয়ার নিহত হবার পর থেকে, বিএনপির তরুণরা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ’বেঈমান চৌধুরী’ বলে ডাকতো। সেই তরুণদের একজন ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির এই তরুণরা মনে করতো, জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পিছনে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর হাত আছে। ১৯৮৩ সালে বেগম জিয়া যখন বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। তখন যারা বেগম জিয়ার নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছিলেন, বি. চৌধুরী ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এ সময় ধানমণ্ডিতে তৎকালীন বিএনপি কার্যালয়ে এক কর্মী সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অধ্যাপক ডা. বি. চৌধুরীকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ‘বেঈমানী করলে, আপনার নাম হবে বেঈমান চৌধুরী।’ (সূত্র ‘দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ নভেম্বর ১৯৮৩)।
বিএনপিতে বি. চৌধুরী বেঈমান থেকে শয়তানে পরিণত হন ২০০২ সালের ২১ জুন। তাঁকে প্রথম শয়তান বলেন, এই গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ই। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, ২০০২ সালের ২১ জুন বিএনপির অনির্ধারিত সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকের আগে, বেগম জিয়া সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ই প্রথম ঘোষণা করেন ‘রাষ্ট্রপতির পদ থেকে আমরা শয়তানের অপসারণ চাই’ (সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ জুন ২০০২)। এরপর সংসদীয় দলের সভায় রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে তুলোধুনো করা হয়। অনতি বিলম্বে তাঁকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানানো হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদীয় দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ না করলে বি. চৌধুরীকে ইমপিচ করা হবে।’ ঐ বৈঠকের বার্তা অধ্যাপক চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরী তাঁর পিতাকে জানান। ডা. চৌধুরী তাৎক্ষণিক ভাবেই স্পিকারের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠান। এরপর থেকে বিএনপিতে তাঁকে শয়তান চৌধুরী বলেই ডাকা হয়। এজন্যই গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শয়তানের সঙ্গে ঐক্যের কথা বলেছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের মতে, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীও জানেন, বিএনপির একটি অংশ তাঁকে ’শয়তান’ ডাকে। এজন্যই তিনি খেপেছেন। আর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সব সময়ই বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। বিএনপিতে যাঁরা জাতীয় ঐক্যে বি. চৌধুরীকে চান না গয়েশ্বর তাঁদের অন্যতম। ঐক্য চান না জন্যই কি ঘরের ডাকে গয়েশ্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বি. চৌধুরীকে ডাকলেন?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।