নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যকার দলীয় কোন্দল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জাতীয় সংসদের একাধিক আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এই প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই নিজেদের হয়ে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত এমনই একটি আসন হচ্ছে চাঁদপুর-৩ আসন।
চাঁদপুর-৩ সংসদীয় আসনটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ২৬২ তম আসন। চাঁদপুর সদর উপজেলা ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩০২৫৭ জন। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে গত দুইবারের নির্বাচিত এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য আছে বলা যাবে না। কারণ এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরাই জয়লাভ করেছিল। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আলম খান এবং ৭ম ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জি এম ফজলুল হক জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে এই আসনে বিএনপির আধিপত্য ভঙ্গ করেন ডা. দীপু মনি। ওই নির্বাচনে ডা. দীপু মনি পান ১৩৪৮৩৬টি ভোট আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জি এম ফজলুল হক ১১৬০৬৮টি ভোট পেয়ে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দীপু মনি এবারও চাঁদপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু একই এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন সুজিত রায় নন্দীও। সুজিত রায় নন্দী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হওয়ায় রাজনীতিতে তাঁর প্রভাবও কম নয়। এছাড়া চাঁদপুরের ওই নির্বাচনী এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার একটি বিরাট ফ্যাক্টর। এর মধ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বী সুজিত যদি দীপু মনির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় তাতে এলাকায় আওয়ামী লীগের ভোটারদের মধ্যে স্পষ্টতই বিভক্তি তৈরি হবে। এমন অবস্থায় এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী নিজেদের স্বপক্ষে এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির এই দুই সদস্যের দ্বন্দ্বে ইতিমধ্যেই বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। অথচ নির্বাচনের আগে বাকি আছে তিন মাসেরও কম সময়। এত অল্প সময়ের মধ্যে এই বিরোধ কীভাবে মিটবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন