নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০১ পিএম, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার আগেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামি ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পরপরই নির্বাচন কমিশন, জাতীয় নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশন বলছে, জাতীয় নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার এটাই রীতি। আনুষ্ঠানিক তফসীল ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্ব প্রণোদিত হয়ে একগুচ্ছ ঘোষণা দেবেন। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। একাধিক সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বেশ কিছু নাটকীয় ঘোষণা আসবে। এই ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে সব জটিলতা এবং সংশয়ের অবসান হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত ভাষণে সকল রাজনৈতিক দলকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহনের আহবান জানাবেন। তিনি বলবেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব।’ প্রধানমন্ত্রী একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন যেন তাতে ঘটে সে আহবান জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধামন্ত্রীর সম্ভাব্য ভাষণে তিনি ২০১৪’র নির্বাচনের প্রেক্ষাপট, বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দেবেন। টানা দুবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের অগ্রযাত্রার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরবেন।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে আদলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, একই আদলে বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কিছু চমক থাকতে পারে বলে আভাষ পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, তফসীল ঘোষণার সাথে সাথে বিদায়ী সংসদ সদস্যরা ক্ষমতাহীন হয়ে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানাবেন। সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা পাবেন না বলেও ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও মন্ত্রীসভার সদস্যরা শুধুমাত্র দৈনন্দিন কার্যক্রমে সীমিত থাকবেন বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিতে পারেন। মন্ত্রীরা তাঁর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় কোন প্রটোকল পাবেন না বলে ঘোষণা আসতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, তফসীল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে প্রশাসনের দায়িত্ব পাবেন তারও উল্লেখ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করাই হবে বিদায়ী সরকারের একমাত্র কাজ।
যদিও সরকার বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই। বর্তমান সংসদের বাইরে কোন মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে না। কিন্তু একাধিক সূত্র আভাষ দিয়েছে, এ ব্যাপারে নাটকীয় ঘোষণা আসতে পারে। সংবিধানে প্রতি দশ জন মন্ত্রীর একজন অনির্বাচিত মন্ত্রী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এই বিধানের প্রয়োগ ঘটিয়ে আনুপাতিক হারে কয়েকজন অন্য দলের নেতাকে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভুক্তির চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এরকম হলে, কতজন মন্ত্রী অন্য দল থেকে নেয়া হবে, বা কোন কোন দল থেকে নেয়া হতে পারে, সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন,‘ অপেক্ষা করুন।’
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন