নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৫ এএম, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে ওই সব এলাকায় স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দল ও বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত আসনগুলোর একটি হচ্ছে ফরিদপুর- ৪ আসন।
৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৬ জন ভোটার সংবলিত ফরিদপুর-৪ আসনটি জাতীয় সংসদের ২১৪ নং আসন। এই আসনে ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী আকমাল ইবনে ইউসূফ, ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় নির্বাচনে আবারও বিএনপির চৌধুরী আকমাল ইবনে ইউসূফ নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিলুফার জাফরউল্লাহ্ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯১ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকের পার্টির মোস্তফা আমীর ফয়সলকে প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। সেবার বিএনপির প্রার্থী মো. শাহ্ আলম রেজা পান মাত্র ৩ হাজার ৯৩৭টি ভোট। তবে ২০১৪ সালের দশম নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে বিজয় লাভ করেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ্কে পরাজিত করেন তিনি।
মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে। নিক্সন চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় বলে প্রচার করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মাসেতু দুর্নীতির সঙ্গে যাদের নাম জড়িত, তাঁরা তাঁর আত্মীয় নন। সেবার নিক্সনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ থেকে ফরিদপুর-৪ আসনে কাজী জাফরউল্লাহ্কে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও সেই নির্বাচনে কাজী জাফরউল্লাহকে হারিয়ে দিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তাঁরা উভয়ের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এবারও নিক্সন সম্ভবত আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন না চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন। তবে নিক্সন বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি জনগণকে নিয়ে তাঁর প্রাণপ্রিয় দল আওয়ামী লীগের নৌকায় উঠবেন। প্রায়ই তিনি সভা-সমাবেশে কাজী জাফর উল্লাহকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করেন। এছাড়া ফরিদপুরে নিজের উন্নয়ন কর্মের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী নিক্সন।
অন্যদিকে কাজী জাফরউল্লাহ আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন প্রত্যাশী এলাকায় প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন তিনি। ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজী জাফর উল্লাহর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বড় নেতা হিসাবে এলাকায় বেশ জনপ্রিয়ও তিনি।
সব মিলিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনে নিক্সন ও জাফরউল্লাহর বিরোধ তুঙ্গে। এমনকি এলাকায় নিক্সন ও কাজী জাফরউল্লাহর গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটে থাকে। কিছুদিন আগে এমনই এক সংঘর্ষের জের ধরে ভাঙ্গায় কাজী জাফরউল্লাকে নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছিলেন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।
গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এমন প্রকাশ্য বিরোধে অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।