নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা মত দিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ না করার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, তিনি সংলাপ করবেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমার দরজা সবার জন্য খোলা। কোনো চাপে নয়, আমি তাদের কাছে শুনতে চাই তাঁরা কি চায়।’ আজ দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় এভাবেই পাল্টে গেল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সবাইকে জানিয়ে দিলেন যে তিনি সংলাপ করবেন, দিন তারিখ ঠিক করে তাঁদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) জানাতে। প্রধানমন্ত্রীর এই কৌশলে ধরাশায়ী হলো ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেলে যখন সংলাপে সম্মতির ঘোষণা দিলেন, তখন বিব্রত এবং অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ. স. ম. আবদুর রব বললেন, ‘সত্যি বলতে কি আমরা চিন্তাও করিনি এত দ্রুত এবং সহজে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সংলাপে রাজি হবেন।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বললেন, ‘শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, তা আরেকবার প্রমাণ করলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা আলোচনার টেবিলে আমরা সংকট সমাধানের একটা পথ খুঁজে পাবো।’
গতকাল রোববার রাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন ড. কামাল হোসেন । আর দলের সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেন গণফোরামের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু। রাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা সংলাপের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর, শুধু মন্ত্রীদের নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় শেখ হাসিনা সংলাপে যেতে রাজি হন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনের কৌশলকে টেক্কা দিলেন। এরফলে সংলাপ ফেলে চটজলদি ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন জনসমর্থন পাবে না। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশকে তিনি উত্তপ্ত হতে দিলেন না। আন্তর্জাতিকভাবেও এর ফলে সরকারের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা প্রমাণিত হলো। এরপর যদি সংলাপ ব্যর্থও হয় তবুও একতরফা নির্বাচনের জন্য কেউ সরকারকে দায়ী করতে পারবে না। স্পষ্টত: শেখ হাসিনা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দায়িত্ব সরকারের ঘাড় থেকে নামিয়ে বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দিলেন।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে বৈঠকে সংলাপের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই বৈঠকে নেতারা বলেছিলেন, সরকার কিছুতেই রাজি হবে না। ঐ বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, সরকার সংলাপ টংলাপ করবে না। ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, আমরা চিঠি দিলে তো সরকার নাকচ করবে। আমরা এটাই চাই। এর ফলে আমরা সবাইকে বলতে পারব সরকার সংলাপ চায় না। এর ফলে আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া সহজ হবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় না, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় না- এজন্যই সংলাপ চায় না, এটা প্রমাণ করতেই ড. কামাল চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের কৌশল বুমেরাং হলো তাঁদের জন্যই। বেগম খালেদা জিয়া জেলে, বিএনপির অনেক নেতা গ্রেপ্তার এবং পলাতক। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক নেতা কর্মীদের ভুল বার্তা দেবে বলে মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ইতিমধ্যেই সংলাপের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন ‘সরকার তো বলেই দিয়েছে সাত দফার একটি দাবিও মানবে না। তারপরও সংলাপে যাব কী করতে? নাস্তা খেতে?’ তিনি মনে করেন, ‘এর আগের বারও, শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে টেলিফোন সংলাপে ডেকে সবাইকে দেখিয়েছেন। ঐ টেলিফোন দিয়েই তিনি একতরফা নির্বাচন সেরে নিয়েছেন। এবারও হয়তো তাই করবেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করেছিলেন। ওই সংলাপের জন্য বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানালে তা বেগম জিয়া প্রত্যাখ্যান করেন।
এবার সংলাপে শেখ হাসিনা কী চমক দেখাবেন, সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।